• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাংঘর্ষিক আইন হলে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করবেই: প্রধান বিচারপতি


আদালত প্রতিবেদক এপ্রিল ৩০, ২০১৭, ০৪:২৭ পিএম
সাংঘর্ষিক আইন হলে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করবেই: প্রধান বিচারপতি

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ভবিষ্যতে সংসদ সংবিধানের কোনো বিধান বা অন্য কোনো আইন সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল করতে সুপ্রিম কোর্ট পিছপা হবে না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন, তা সুপ্রিম কোর্টকে জুডিশিয়াল রিভিউ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সংবিধানের এই ক্ষমতা বলেই সুপ্রিম কোর্ট ৫ম, ৭ম, ৮ম ও ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এতে কারো কোনো দ্বিমত নেই।

র‌বিবার (৩০ এপ্রিল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জ‌বি) কেন্দ্রীয় অডিট‌রিয়া‌মে ভূ‌মি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভা‌গের উদ্বোধ‌নী অনুষ্ঠা‌নে প্রধান অতিথির বক্ত‌ব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসকে সিনহা বলেন, ‘ভারত, শ্রীলংকা, নেপালতো অনেক উপরে এমনকি পাকিস্তানের মত দেশও উচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আদালত। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা বহাল আছে কিন্তু আমরা সেটি এখনো করতে পারিনি। এজন্য প্রধান বিচারপতি কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনারা আশ্চার্য হবেন যে পাকিস্তানের সংবিধানকে এক সময় বলা হত আইয়ুব খানের সংবিধান। সে দেশে এখন যে আইনের শাসন চলছে নিম্ন আদালতে এটা আজকেও আমরা পাইনি।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ ও সরকার সবাইকে আইনের শাস‌নের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখ‌তে হা‌বে। সু‌প্রিম কোর্ট সাংবিধা‌নিকভা‌বে আইনের যে ব্যাখ্যা দেয় তা মে‌নে নিতে হবে। একটা দেশের উন্নত রা‌ষ্ট্রের স্বীকৃ‌তির মাপকা‌ঠি শুধু টাকা দি‌য়ে হ‌লে মধ্যপ্রা‌চ্যের অনেক দেশ অনেক আগেই উন্নত রা‌ষ্ট্রের স্বীকৃ‌তি পেত। উন্নত রা‌ষ্ট্রের স্বীকৃ‌তি পাওয়ার জন্য আইনের শাসন পালন কর‌তে হ‌বে। প্রত্যেক‌কে আইনের শাসন মে‌নে চল‌তে হ‌বে।’

তি‌নি আরও ব‌লেন, ‘এদে‌শের সব ঐতিহা‌সিক রায় আমার হা‌তে হ‌য়ে‌ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় আমার হতে হয়েছে। সং‌বিধা‌নের বি‌ভিন্ন সং‌শোধনী‌তে যেসব অসঙ্গ‌তি র‌য়ে‌ছে তা আমরা প‌রিবর্তন ক‌রে‌ছি।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য ঐক্যমত হলেই সংবিধান সংশোধন করতে পারে। শুধু দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যই না পুরো সংসদ মিলে যদি সংবিধান বাতিল করে, সেই ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট যদি দেখে, এতে সংবিধান মূল ভিত্তি নষ্ট হয়ে গেছে, আইনের শাসন, ‍বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকারে আঘাত হেনেছে। তাহলে সংসদের ওই সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কিছু রায় দেই। তা যদি কারো বিরুদ্ধে যায়। তখনই তারা এমন সব মন্তব্য করেন যা আমাদের কষ্ট লাগে। কোন মতেই আমরা নিজেদেরকে সভ্য হিসেবে দাবি করতে পারব না, যতদিন পর্যন্ত আমরা সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। সেটা যদি আমার বিরুদ্ধেও যায়, তা আমি মাথা পেতে নেব।

আইনের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার সংবিধান সুপ্রিম কোর্টকে দিয়েছে আর কাউকে দেয়া হয়নি। আর এই সংবিধান সমন্বত রাখার জন্য সময়ে সময়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এটাকেই মানতে হবে।

পৃথিবীর উন্নত দেশে এমনকি ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় বিচারপতিরা, প্রধান বিচারপতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেগুলারলী লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য পত্রিকায় বের হয় না, আপনাদের প্রধান বিচারপতির বক্তব্য পত্রিকায় বের হয়। তার একটাই কারণ। আমরা সেই পর্যায়ে যেতে পারিনি। আমাদের আইনের শাসন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো করেছে।

ডিজিটাল এভিডেন্স (ভিডিও সাক্ষ্য) প্রমাণ করার জন্য কোন আইনে এটা গ্রহণযোগ্য করা যায়। কোন আইনে কিভাবে প্রমাণ করবেন দুঃখজনক হলেও এখন পর্যন্ত এমন কোন আইন করা হয়নি, এর কোন ব্যাখ্যা করা হয়নি।

ভারতে অনেকদিন আগেই ডকুমেন্টারী ইভিডেন্সের সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে দিয়েছে। তারা ডিজিটাল এভিডেন্স দিতে পারে, আমরা পারি না। আমরা মুখে বলি কিন্ত কাজের সঙ্গে আমার কথা সমন্বয় থাকে না। আামদের ক্রিমিনাল আইনের বিচার করতে হিমশিম করতে হচ্ছে। এসব অনেক আইনই স্কেপ করতে হবে। ভারতে অনেক আগেই করে ফেলেছে। আমাদেরও সেটা করতে হবে।

আমাদের সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আমি সরকার প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিছুদিন আগে তিনি বলেছেন, তিনটি বিভাগ কারো ওপর কেউ যাতে প্রাধান্য না পায়। একে অপরের পরিপুরক হিসেবে কাজ করার জন্য। এটা আমাদেরও কথা। এটাই হওয়া উচিত। এই যে পরিপুরক হিসেবে কাজ করবো আমরা। কিভাবে করবো প্রশ্নটা হলো এই আর্টিকেল ৭ এ বলা হয়েছে, ক্ষমতার উৎস জনগণ। ক্লোজ ২ বলছে যদি কোন আইন অন্য কোন প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হয় তাহলে এমনতেই সেটা বেআইনী হয়ে যাবে।

এরপর আছে জুডিশিয়াল রিভিউ। আমাদের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়েছেন সেখানে জুডিশিয়াল রিভিউর ক্ষমতা একমাত্র সুপ্রিম কোর্টকে দেয়া হয়েছে। এখন একটা আইনের সঙ্গে আরেকটি আইনের যদি পরিপন্থী হয় তাহলে এটা কে ডিকলার দেবে। জুডিশিয়াল ক্ষমতা অনুযায়ী সব কোর্ট দেবে। কোর্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এই কারণেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ভূ‌মি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রিষ্টীন রিচার্ডসন এর সভাপতিত্বে এ সময় বি‌শেষ অতি‌থি হি‌সে‌বে বক্তব্য রা‌খেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সে‌লিম ভূইয়া, আইন অনুষ‌দের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!