• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাপের নগরীতে পরিণত হবে কী রাজশাহী!


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১২, ২০১৭, ০৭:১৬ পিএম
সাপের নগরীতে পরিণত হবে কী রাজশাহী!

ঢাকা: রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায় যেভাবে একের পর এক বিষধর গোখরা ও ডিম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সাপের নগরীতে পরিণত হবে রাজশাহী! সম্প্রতি রাজশাহীতে সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। কিছু দিন যেতেই না যেতেই নতুন নতুন পাওয়া যাচ্ছে বিষধর সাপের খবর। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় শোবার ঘরে পাওয়া গেল ৩৫টি বিষধর গোখরা ও ১৫।

হঠাৎ করে কেন রাজশাহীতে সাপের আনাগোনা বেড়ে গেছে তা খতিয়ে দেখছে গবেষকরা। এসব ঘটনার পর রাজশাহীবাসী নিজেদের ঘর, রান্নাঘর কিংবা গোয়ালঘরে তল্লাশি চালাচ্ছেন নিয়মিত।

এদিকে বনে কিংবা জলে নয়, এসব সাপ বাসা বেঁধেছিল শোবার ঘরে ও রান্নাঘরে! এ নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ রয়েছেন সাপ আতঙ্কে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামের  মৃত ফায়েজ উদ্দিন আরিন্দারের ছেলে হাসান উদ্দিন আরিন্দার বাড়ির  শোবারঘর থেকে  ৩৫টি বিষধর গোখরা সাপ ও ১৫টি সাপের ডিম পাওয়া গেছে।  

স্থানীয়দের সহায়তায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই সাপ ও ডিম উদ্ধার করা হয়। পরে একে একে সাপগুলোকেই পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ডিমগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে মা সাপকে ধরা যায়নি।

স্থানীয়দের ধারণা, চলতি মৌসুমে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সাপ ফসলের ক্ষেতে ডিম পারার উপযোগী পরিবেশ না পাওয়ায় মানুষের বসতবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনায় হাসান আলীর  বাড়ির লোকজনসহ পুরো গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুদেরকে তাদের অভিভাবকরা চোখের আড়াল করছেন না। গ্রামবাসীর ধারণা এমন সাপের বাসা এলাকায় আরো অনেক বাড়িতেই থাকতে পারে।

হাসান আলী আরিন্দা জানায়, সোমবার (১০ জুলাই) রাতে টিভি দেখা শেষ করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে শোবার ঘরের মেঝেতে একটি বিষধর সাপ দেখতে পান।  এসময় সাপটিকে মেরে বাহিরে ফেলে দেন তিনি।  মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির অন্য একটি ঘরে আরো একটি সাপ দেখতে পেলে তিনি সেটাকেও  মেরে ফেলেন।  এসময় ওই ঘরের মেঝেতে একটি গর্ত দেখতে পান তিনি।

পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই গর্ত খুঁড়ে আরও ১০টি তাজা বিষধর গোখরা সাপের বাচ্চা পাওয়া গেলে তা মেরে  ফেলা হয়।  এসময় ওই গর্তে ১৫টি সাপের ডিমও পাওয়া যায়। স্থানীয়রা ওই গর্তের সুত্র ধরে আরও তিনটি গর্তের সন্ধান পায়। সেখানে এক এক করে মোট ২৫টি বিষধর সাপ মারা হয়। পরে গর্তে কেরোসিন ঢেলে আগুন  দেয়া হয়।  তবে এখনও মা সাপটিকে পাওয়া যায়নি।  সাপগুলোর একেকটি লম্বায় প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা।   

এরআগে ৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় তানোর পৌর এলাকার ভদ্রখন্ড মহল্লায় ১২৫টি গোখরা সাপের সন্ধান মেলে। সাপগুলোকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বাড়িওয়ালা।

গত ৪ জুলাই রাজশাহী শহরের একটি বসতঘর থেকে ২৭টি বিষধর সাপ পাওয়া গিয়েছিল।

নতুন করে ১২৫টি গোখরা সাপের বাচ্চা যে বাড়িতে পাওয়া গেছে সেখানকার বাসিন্দা আক্কাছ আলী। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, সন্ধ্যার পর রাতের খাবার তৈরি করতে রান্নাঘরে রান্না ঘরে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসনা বিবি। সেখানে মেঝেতে তিনটি গোখরার বাচ্চা দেখে আতঙ্কে চিৎকার দেন তিনি।

চিৎকার শুনে রান্না ঘরে ছুটে যান আক্কাছ আলী। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ২ ছেলে হাসিবুর রহমান ও আজিবুর রহমানও রান্না ঘরে যান। তারা ৩ জনে মিলে ৩টি সাপের বাচ্চা মারার পর ঘরের কোনায় গর্ত থেকে আরও সাপের বাচ্চা বেরিয়ে আসতে দেখেন তারা।

আক্কাছ আলী বলেন, ওই গর্ত দিয়ে একের পর সাপ বের হতে থাকে। আর আমরা একের পর এক সাপ মারতে থাকি। এর এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। সব মিলিয়ে মোট ১২৫টি সাপ মারা হয়। পরে গর্ত খুঁড়ে আরও ১৩টি সাপের ডিম পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, প্রতিটি সাপ লম্বায় প্রায় দেড় ফুট হবে। ১২৫টি সাপ মারার এক পর্যায়ে ওই গর্ত থেকে একটি মা সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছি।

আক্কাছ আলী বলেন, পুরনো মাটির বাড়ি হওয়ায় ইঁদুরের গর্তে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে মা গোখরা। সাপের বাচ্চাদের বাপ-মা বেঁচে থাকায় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা বাড়িতেই থাকতে চাচ্ছে না। ঘটনার পর থেকে আমার বাড়িতে সাপ দেখতে স্থানীয় লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন।

গত ৪ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরের বুধপাড়া এলাকায় একটি ঘরে থাকা ইঁদুরের গর্ত থেকে ২৭টি গোখরা সাপ বের করা হয়েছিল। ওই সাপগুলোকেও মেরে ফেলেছেন ওই বাড়ির বাসিন্দা মাজদার রহমান।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ভেটেরিনারি সার্জন ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানা ও কেন্দ্রীয় উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, যেকোনো বন্যপ্রাণী ধরা পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগকে জানানো উচিত। কারণ বন্যপ্রাণী উদ্ধারের জন্য তাদের একটি দল রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাড়ির পাশে জঙ্গল বা ডোবা অথবা পুরোনো বাড়ির মাটির গর্তেও সাপ থাকার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড রাখলে সাপ আসতে পারে না। তারা চিড়িয়াখানায় কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহার করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!