• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
৬ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা ৩১ হাজার ৬৬৯টি

সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছেই


সোনালী বিশেষ আগস্ট ৬, ২০১৭, ০১:৪৪ পিএম
সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছেই

ঢাকা : দেশে নৈতিক অবক্ষয় উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, দেশের মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষেরা এ নিয়ে বারবার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। তারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতর জন্য সামাজিক অস্থিরতা, অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেটের কুফল, অশ্লীলতা, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা কারণকে দায়ী করছেন।

একই সঙ্গে দিন দিন মধ্যবিত্তদের মূল্যবোধ কমছে এবং উচ্চবিত্তদের টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়ছে। এমন ঘটনার প্রভাবে অশ্লীলতার আগ্রাসনে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়। আকাশ সংস্কৃতি, মাদকের বিস্তার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা। তাদের দাবি, নারীর প্রতি সংঘটিত অপরাধকে খাটো করে দেখা। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া। সাক্ষীকে ভয় দেখানো। প্রভাবশালীদের অর্থের প্রলোভন ও নির্যাতিত পরিবারের ঘটনা চেপে যাওয়ার চেষ্টার কারণেই নারী নির্যাতন রোধ সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্রমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের বা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩১ হাজার ৬৬৯টি। এর মধ্যে ২০১০ সালে নারীর প্রতি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে পাঁচ হাজার ৫৭০টি। ২০১১ সালে ছয় হাজার ৬১৬টি। ২০১২ সালে পাঁচ হাজার ৬১৬টি। ২০১৩ সালে চার হাজার ৭৭৭টি। ২০১৪ সালে চার হাজার ৬৫৪টি এবং ২০১৫ সালে চার হাজার ৪৩৬টি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তথ্য অনুযায়ী, নারী নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটছে। তার সিংহভাগই যৌন নির্যাতনের ঘটনা। সাধারণত এর শিকার ১৮-১৯ বছর বয়সী মেয়েরা। গত মাসে ১৭ জন নারী ওসিসির সহযোগিতা নিয়েছেন। এর আগের মাসে ২২ জন, এপ্রিলে এক সপ্তাহে ১০ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে ওসিসিতে আসেন।

ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম জানান, ওসিসির পরিসংখ্যান দিয়ে ঢাকা বা এর আশপাশের নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের সঠিক চিত্র বোঝা যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পরীক্ষা করিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, ওসিসিতে আসছেন না। তবে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা আরো বেশি, প্রকাশ পাচ্ছে কম।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনাই চাপা পড়ে যায়। বিশেষ করে শহরের বস্তি অঞ্চলগুলোতে অবস্থা খুবই খারাপ। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে প্রভাবিত করে ধর্ষকেরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আর তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক হয়রানির ভয়ে ধর্ষণের শিকার নারী ও তাদের স্বজনেরা কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইছেন না।

তবে দিল্লির ঘটনার পর একটা সচেতনতা তৈরি হওয়ায় অনেকগুলো ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। মানুষের সাহায্য ও সাক্ষ্যেই মানিকগঞ্জের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আবারও নড়েচড়ে ওঠার সময় এসেছে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বগুড়া ছাত্রী ধর্ষণ, রাজধানীতে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, শরীয়তপুরে ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া দশম শ্রেণির ছাত্রীর আÍহত্যা, টাঙ্গাইলে এক তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণ, আপন ফুফার হাতে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণী ধর্ষণসহ একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তীব্র নিন্দা জানায়।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতায়, ধর্ষণ ও হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যথাসময়ে ন্যায়বিচার না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া কিছু দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপরাধ ঘটছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এসব ঘটনা দ্রুত আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান কমিশনের চেয়ারম্যান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়া শুরু করেছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!