• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে নানা টালবাহানা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১৬, ২০১৭, ০৫:৫৮ পিএম
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে নানা টালবাহানা

ঢাকা: ছয় বছরে চার দফা সময় বেঁধে দেওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেনি ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা ঢাকার বাইরে দেখালেও এর কয়েকটির কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়ি ও অস্থায়ী কার্যালয়ে। এভাবে আইন না মানায় কয়েক দফা সনদ বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

তবে এ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অভিযোগ রয়েছে, প্রচলিত আইন না মানা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে আছে ক্ষমতাশালী চক্রের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। এর মধ্যে ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে। একটি বন্ধ রয়েছে।

উদ্যোক্তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা ঢাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে পড়তে বেশি আগ্রহী। রাজধানী বা শহরের বাইরে গেলে শিক্ষার্থী সংকট আরো তীব্র হবে। এ জন্য নিয়ম না মেনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বারবার তাগাদা দিলেও নানা কৌশলে তারা তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের রক্ষার জন্য আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রভাবশালী চক্র। এ চক্রের প্রশ্রয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান সনদ বাণিজ্য চালাচ্ছে। টিআইবির এক জরিপেও ক্ষমতাশালী ওই চক্রের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র আছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সরব। সাড়ে আট বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কাজ করছে। তবে এখনো পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।

এরপরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আছে জবাবদিহিতার বাইরে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ‘শেল্টার’ দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার নিয়ম আছে। এ নীতিমালার আওতায় পুরনো ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে। অস্থায়ী কার্যালয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান পার করছে এক যুগ, কোনো কোনোটি আবার দুই দশক পর্যন্ত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত সময় দিলেও ১১টি নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে আংশিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকিগুলো জমি কেনা ও ভবনের নকশা করানোর কাজে সময় পার করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা এখন উল্টো সরকারের কাছে ‘নিষ্কটক’ জমি চাচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে দুই দফায় শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিলেও মন্ত্রী সাড়া দেননি বলে জানা যায়।

ইউজিসির তথ্যমতে, ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন নয়টির। জমি কিনলেও নির্মাণকাজ শুরু করেনি সাতটি। প্রিমিয়ার, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ও ইবাইসের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অগ্রগতি নেই। আইন অনুযায়ী এখনো জমি কেনেনি প্রেসিডেন্সি।

ইউজিসির একাধিক প্রতিবেদনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইন না মানার চিত্র আছে। সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস সাভারের বিরুলিয়ার খাগানে, পাশাপাশি রাজধানীর পান্থপথে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি রূপনগরে নিজস্ব ক্যাম্পাস করলেও মিরপুর কমার্স কলেজ সড়কের একটি ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এশিয়ান আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার উত্তরার ক্যাম্পাসেও কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিশোরগঞ্জে নির্মিত ভবনের পাশাপাশি ঢাকায়ও রয়েলের কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি থাকার কথা থাকলেও সাউথ ইস্ট ও দ্য মিলেনিয়াম চলছে ফাউন্ডেশনের নামে কেনা জমিতে।

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। ওই আইন প্রণয়নের আগে দেশে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করে। আইন পাস হলে ওই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। তখন মন্ত্রণালয় ‘রেড অ্যালার্ট জারি’ করে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় দেয়। মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায়, ১৪ সালে তৃতীয় আর ১৫ সালের জুনে চতুর্থ দফায় সময় দেয়। চতুর্থ দফার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

নিয়ম না মানা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বারবার বলে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কয়েকবার কমিটিও গঠন করে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ঠিক করতে গত ৮ মার্চ মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সবশেষ যৌথ বৈঠক হয়।

কিন্তু সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং আবারও চার সদস্যের কমিটি গঠিত হয় ইউজিসির সদস্য আকতার হোসেনকে প্রধান করে। এ কমিটি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য পঞ্চম দফা সময় পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘চাপ দেওয়ার কারণে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে, অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। যারা একেবারেই যেতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চতুর্থ দফা সময় দেওয়ার পর শেষ দিকে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যারা আইন মেনে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি, সেগুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ তার বক্তব্যের বাস্তব কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। যোগাযোগ করলে সদ্য গঠিত কমিটির কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি আকতার হোসেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের জমি কেনা ও ভবন নির্মাণের জন্য কোনো ঋণ দেওয়া হয় না। ঋণ পেলে অনেকের পক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব হতো। নির্মাণের জন্য চার দফায় সময় দেওয়া হলেও সব প্রতিষ্ঠানের জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা বলেছেন, তাদের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন। কোনো উদ্যোক্তার স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের সদিচ্ছা না থাকায় হয়তো নির্মাণ হচ্ছে না।’

জানা যায়, ইনডিপেনডেন্ট, গণবিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থসাউথ, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজিসি ট্রাস্ট, এশিয়া প্যাসিফিক ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস আছে।

গ্রিন পূর্বাচলে ও দ্য পিপলস নরসিংদীর শিবপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। ইউনাইটেড, সাউদার্ন, ইস্টার্ন, ওয়ার্ল্ড, ইসলামী, ইস্ট ডেল্টা ও আশার ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন। স্টেট, মানারাত, প্রাইম এশিয়া, মেট্রোপলিটন, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট, সাউথ এশিয়া ও ভিক্টোরিয়া জমি কিনলেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!