• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হরতালের সমর্থন দিয়েও মাঠে নামেনি বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১, ২০১৭, ০২:১০ পিএম
হরতালের সমর্থন দিয়েও মাঠে নামেনি বিএনপি

ঢাকা : বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) হরতাল ডেকেছিলো বামপন্থী দলগুলো। ভোর ৬টা দুপুর ২টা পর্যন্ত ছিলো হরতালের ব্যাপ্তি। আগেরদিন এই হরতালে সমর্থন জানায় বিএনপির মতো বড় রাজনীতিক দলও। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার হরতালে সমর্থনের কথা জানালেও এই কর্মসূচিতে বিএনপির কোনো অংশগ্রহণ দেখা যায়নি।

এদিকে, গতকাল ভোর ৬টায় বামপন্থী কয়েকটি দলের শাহবাগে খণ্ড খণ্ড অবস্থান ও স্লোগান, এরপর কাঁটাবন এবং সেখান জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টনের দিকে কয়েকটি স্লোগান বাদ দিলে হরতাল বলতে কিছু ছিলোই না। শাহবাগে হরতালের সমর্থনে ছোট্ট মিছিলে সেভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টাও করেনি পুলিশ। সকাল রাজধানীজুড়ে স্বাভাবিক নিয়মে খুলেছে অফিস, আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। রাজধানীতে যান চলাচলও ছিলো অন্যান্য দিনের মতোই। অন্য সময়ের মতো হরতাল মানে যে আগুন, জ্বালাও পোড়াও তার লেশ মাত্র ছিলো না। হরতালের সমর্থনে পিকেটিংও চোখে পড়েনি। সকাল রাজধানীজুড়ে বিশাল যানজট বুঝিয়ে দিলো, এখন আর হরতালের গুরত্ব নেই মানুষের জীবনযাত্রায়।

তবে গতকাল ভোরে হরতালের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে আসে। হরতাল সমর্থকরা জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়। তখন শাহবাগের মোড়ের এক পাশে পুলিশের তিনটি সাঁজোয়া যান রাখা ছিলো। বেলা গড়াতে গড়াতে তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে শাহবাগ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে নিয়মিত পুলিশ এখনো আগের মতোই অবস্থান করছেন।

গতকাল ভোরের দিকে একবার পুলিশ ওই এলাকায় সাঁজোয়া যান বিকট শব্দ সৃষ্টি করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয় বলে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন। একজন নেতার অভিযোগ, শাহবাগ এলাকায় না হলেও বিভিন্ন জায়গায় হরতাল সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। শাহবাগ পুলিশ বলছে, এখানে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কাউকে বাধা দেয়া হয়নি। এখনো রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কাটাবন সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশাল যানজট লেগে আছে।

একরাম হোসেন নামে একজন পথচারি জানান, হরতালে গাড়ি কম হবে মনে করে বাসা বের হলাম, এখন তো আরো উল্টো অবস্থা। বিশাল জ্যামে বসে আছি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মকসুদুল করিম বলেন, এখন মানুষ হরতালকে পাত্তা দেয় না। জীবনচলার পথে এখন প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে হরতাল গৌন ব্যাপার।

উত্তাপহীন হরতালেও আটক, টিয়ার শেল: বাম দলগুলোর ডাকা হরতালে জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। রাজধানীসহ সারা দেশে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সংগঠনগুলোর একাধিক নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের।

সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতন জানিয়েছেন, সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মুক্তি ভবনে প্রবেশ করে পুলিশ। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ ছয়তলায় দলের নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ক্বাফি রতন আরো জানান, সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাত্রনেতা দীপক শীল, জহর লাল রায়, মোর্শেদ হালিম, নোবেল বড়–য়া, শ্রমিক নেতা জালাল হাওলাদার, যুবনেতা শাখারভ হোসেন সেবকসহ ১১ জনকে আটক করে পুলিশ।

পরে সিপিবির কার্যালয় জানানো হয়, আটকের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ওই ১১ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ সময় ক্বাফি রতন আরো জানান, বাইরে সিপিবি কার্যালয়ে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়, যাতে নেতাকর্মীরা হরতালে অংশ নিতে না পারে।

এ ব্যাপারে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সিপিবি কার্যালয়ের সামনে ওই ১১ জনকে আটক করা হয়। এ সময় সড়কে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। এদের পল্টন থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে ১০ মিনিট পরই এদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার অন্যতম সংগঠন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য জুলহাসনাইন বাবুকে আটক করা হয়েছে। ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলনের সদস্য সৈকত মলি­ক জানান, হরতালের সমর্থনে মিছিল করার সময় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা জুলহাসনাইন বাবুকে আটক করে পুলিশ। দুপুর ১টার পর মোহাম্মদপুর থানা ছেড়ে দেওয়া হয় জুলহাসনাইন বাবুকে।

এ প্রসঙ্গে সিপিবি নেতা ক্বাফি রতন আরো জানান, রাজধানীতে সিপিবির আজিজুর রহমান, আহসান হাবীব লাবলুসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া খুলনায় সিপিবি নেতা এস এ রশীদ, ছাত্রনেতা উত্তম, বাসদ নেতা মিথুনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছেন।

জামালপুরে সিপিবির সভাপতি মোজাহারুল হক মোজা, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মানিক, ছাত্রনেতা সুজনকে আটক করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, রীতা রানী, মাহতাবউদ্দিন, রজব আলী, দেবু, বাসদের জুনায়েদ ইসলাম, জাকির হোসেন পুলিশি হামলায় গুরুতর আহত হন। তবে এসব আটকের বিষয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!