• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁকডাক করায় আন্তর্জাতিক বাজারেও বাড়লো চালের দাম


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ২২, ২০১৭, ০৪:১৩ পিএম
হাঁকডাক করায় আন্তর্জাতিক বাজারেও বাড়লো চালের দাম

ঢাকা: বিশ্বের প্রধান তিনটি খাদ্যের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ভাত। বর্তমানে বিশ্বের সাড়ে তিনশত কোটি মানুষের প্রধান খাবার হলো ভাত। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার মেট্টিক টন, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বেশি। উৎপাদন বেশি হওয়ায় ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল রপ্তানিও করেছিল বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসময়ে পুরো বিশ্বে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টন। যা এর পূর্বের বছরের চেয়ে ০.৪৩ শতাংশ কম। বৈশ্বিকভাবে চালের উৎপাদন কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ার পরেও হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়েছে বাংলাদেশে।

বর্তমান বিশ্বে চাল উৎপাদনে শীর্ষ থাকা দশ দেশ হলো পর্যায়ক্রমে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, জাপান, ফিলিপাইন ও ব্রাজিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত বছর বিশ্বে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। চলতি বছরে তা নেমে ৪৮ কোটি ১০ লাখ টন হতে পারে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে। দেশটির গবেষণা বিভাগ এ বিষয়ে আগেই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে।

অথচ রাজধানী ঢাকার চালের  বড় আড়ৎগুলোর মধ্যে বাদামতলী ও বাবুবাজারে বিভিন্ন প্রকারের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম গত দেড় মাসে বেড়েছে ৩০০ টাকা ও সরু চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হয়েছে মান ভেদে ৫০, ৫১ ও ৫২ টাকায়। বিভিন্ন ব্রান্ডের চিকন চাল ৫২ চাল বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা কেজি প্রতি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি হিসাবে রাষ্ট্রীয় গুদামে ১.৭৭ মেট্রিক টন চাল ও ২.৯১ মেট্রিক টন আটা মজুদ রয়েছে। যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। সরকারের কাছে চাল নেই বুঝতে পেওে দাম বাড়িয়েছে মৌসুমি সিন্ডিকেট চ্রক। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩.৯৩ লাখ মেট্রক টন ও বেসরকারিভাবে ৫০.০৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও ১.১৫ লাখ টন চাল আমদানি করেছে সরকার।

সংকট মেটাতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কিনে আনবে। বাংলাদেশ চাল কিনবে এমন সংবাদে বিশ্বের বাজারে চালের দামও বেড়েছে। একদিকে চালের উৎপাদন এবছর কমে যাওয়ার পূর্বাভাসে শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ চীনও কিছুটা শঙ্কিত। হঠাৎ করে চীনও চাল আমদানি করতে পারে এমন তথ্য আন্তর্জাতিক বাজারে চাউর হয়েছে। পরে বাংলাদেশ সংকট যোগ দেয়ায় চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অন্যান্য রাষ্ট্রও।

সরকারের দেয়া তথ্য মতে, আন্তর্জাতাকি বাজারে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ৪ জুন পর্যন্ত চালের মূল্য ছিল টন প্রতি ৩৮২-৪২৮ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য হয় সর্র্বোচ্চ ৩০.৫৬ টাকা থেকে ৩৪.২৪ টাকা। গত ৯ জুন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৯৭ থেকে ৪৩৬ ডলার প্রতি টন। এক টনেই বেড়েছে ৮ থেকে ১৫ ডলার। এখন এই চাল আনতে হবে ৩৫.৬৬ টাকা থেকে ৪০.১৭ টাকায়। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাজারে গমে মূল্য টন প্রতি গত ৪ জুন ছিল ১৭৪.১৬ থেকে ১৮৭.৫ মার্কিন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে রাষ্ট্র থেকে চাল কিনবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই চাল কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। এমনকি চাল কেনার ঘোষণার আগে ভারতের ব্যবসায়ীরাও যে দামে বাংলাদেশকে চাল দিত, তাও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে সরকারের শুল্ক ছাড়ের সব সুবিধা পাবে না জনগণ।

এ হিসাবে কেজিপ্রতি গমের সর্র্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় ১৫ টাকা। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানিযোগ্য চালের মূল্য প্রতি কেজি ৩৫.৬৫ থেকে ৩৯.৫১ টাকা, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানিযোগ্য চালের মূল্য প্রতিকেজি ৩৫.৬৫ থেকে ৩৯.৫১ টাকা। ও গমের মূল্য প্রতিকেজি ১৯.৮৫ থেকে ২০.১৪ টাকা।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভিয়েতনাম থেকে দুই দফায় ৪৭ হাজার টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। পাশাপাশি মিয়ানমার ও ভারত থেকে কিছু চাল এসেছে। এর প্রভাবে বাজারে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

সূত্র বলছে, চীন এখন পর্যন্ত চাল কেনার কোনো সরকারি ঘোষণা দেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল কেনার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটতে পরতো। সরকারকে আগেই পরিকল্পনা নিতে হতো চালের মজুদ ঠিক রাখতে। বর্ধিত মূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষ কিছুটা কম দামে সরকারি ওএমএস এর চাল কিনে সংসার চালাতে পারতো।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!