• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৫:০৯ পিএম
১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস

রোববার (১১ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস। ৭১-এর এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া পাক হানাদার মুক্ত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়াবাসী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। জানা যায়, ২৫ মার্চ কালো রাতে মেজর শোয়েব’র অধিনায়কত্বে এবং ক্যাপ্টেন শাকিল, ক্যাপ্টেন সামাদ ও লে. আতাউল্লাহ’র উপ-অধিনায়কত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্ট এ কোম্পানির ২১৬ জন সদস্য যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়ায় এসে কয়েক খন্ডে বিভক্ত হয়ে পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, সদর থানা ও আড়ুয়াপাড়া ওয়ারলেস অফিসে অবস্থান নেন। তারা দু’একটি ছাড়া শহরের সকল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ২৬ মার্চ শহরে একনাগাড়ে ৩০ ঘন্টার জন্য কারফিউ জারী করে ও সশস্ত্র টহল দিতে থাকে। তবে কুষ্টিয়ার মানুষ কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং সেনা চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এ সময় রনি রহমানসহ বেশ কয়েকজন পাকসেনার গুলিতে প্রাণ হারান। কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধে রনি রহমান প্রথম শহীদ।

এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে কুষ্টিয়ায় ছোট বড় অনেকগুলি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ডিসেম্বর থেকে পাক সেনা খেদাও শ্লোগানে মুক্তিযোদ্ধা সেনা ঘাঁটিগুলোয় আক্রমণ শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ থেকে ট্যাংক বহর নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করেই পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশের মুখে পড়লে শুরু হয় যুদ্ধ। আর এটাই ছিল হানাদার বাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনীর সম্মুখ ট্যাংক যুদ্ধ। এখানে নির্মমভাবে মৃত্যু ঘটে ২ শতাধিক মিত্র সৈনিকের। শুরু হয় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা। বিধ্বস্ত হয় পাক হানাদারদের দূর্গ। এ লড়াইয়ে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাসহ জেলার সাধারণ মানুষ। তোপের মুখে ১১ ডিসেম্বর প্রত্যুষে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী। মুক্ত হয় কুষ্টিয়া। শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়াতে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে অফিসিয়ালী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জোনাল কাউন্সিলের সেক্রেটারী এম শামসুল হককে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার দেন।

মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার কবি, ছাত্র, সাহিত্যিক, শিল্পী, লেখকের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া হাউজিং-এর খেলোয়াড় সরওয়ার্দী, শিক্ষকদের মধ্যে ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক দূর্গাদাস সাহা প্রমুখ শহীদ হন। সেদিনের কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ইতিহাস আজও মানুষের মনের মনিকোঠায় চির ভাস্কর হয়ে আছে। মুক্ত দিবস উপলক্ষে বার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, জেলা আ. লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনসহ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুষ্টিয়া শাখা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের উদ্যোগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্ত্বরের কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ। এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিস্তম্ভ থেকে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বর পর্যন্ত বিরাট বর্ণাঢ্য র‌্যালি। সকাল ১১টায় কালেক্টরেট চত্ত্বরের কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে আলোচনা সভা। সাড়ে ১১টায় স্মৃতিস্তম্ভে শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী করা হবে। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দিবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান, পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম ও জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীসহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!