• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‌‘তৃতীয় শক্তির’ জোট গঠনের নেপথ্যে


সোনালী বিশেষ আগস্ট ৫, ২০১৭, ০৬:৫০ পিএম
‌‘তৃতীয় শক্তির’ জোট গঠনের নেপথ্যে

‌ঢাকা : ‘তৃতীয় শক্তির’ নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে তোলপাড় চলছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জোট গঠনে চার দল সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

জোটের উদ্যোক্তারা সবাই পোড়খাওয়া রাজনীতিক। তবে তাদের প্রতিষ্ঠিত দলগুলো আলোচনায় থাকলেও কখনও জনপ্রিয়তা পায়নি। যদিও তারা দাবি করছেন, পরিস্থিতি পাল্টেছে। মানুষ দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর বিরক্ত হয়ে তৃতীয় শক্তির সন্ধানে।

ভারতের দিল্লিতে হঠাৎ করে উত্থান হওয়া আম আদমি পার্টি আর সব শেষ ফ্রান্সে ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোনের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় চলে আসা আশাবাদী করে তুলেছে এই নেতাদের। তাদের দাবি, গত চার দশক ধরেই ‘অপশাসনে’র কারণে বাংলাদেশেও আগামী নির্বাচনে চমক দেখানো সম্ভব।

নতুন জোট গঠনের এই উদ্যোগ প্রথম আলোচনায় আসে গত ১৩ জুলাই। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসায় চা চক্রের আয়োজন হয়। যোগ দেন বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী।

আবার ২ আগস্ট দিবাগত রাতে বি চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ছাড়াও আগের বৈঠকে যোগ দেয়া মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সুব্রত চৌধুরীসহ অনেকে যোগ দেন।

এরই মধ্যে নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন জোট গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এত যখন আলোচনা, তখন নতুন জোট গঠন কিন্তু কেবল প্রাথমিক ধাপ এগিয়েছে মাত্র। চারদল মিলে গঠন করেছে লিয়াঁজো কমিটি। দলগুলো হলো বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্য।

বুধবার (২ আগস্ট) রাতে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় যৌথ আন্দোলন গড়ে তুলতে এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে।

শিগগিরই সমসাময়িক ইস্যুতে মাঠে নামারও পরিকল্পনা করছেন এসব দলের নেতারা। তবে এইসময়ের মধ্যে নিজেদের মধ্যে পারষ্পারিক আলোচনা সেরে জোট গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোট গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা একথা নিশ্চিত করেছেন।

নতুন জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করতে বি চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে বসেন দুই বড় জোটের বাইরের নেতারা।

বুধবার (২ আগস্ট) রাতের বৈঠকে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকীরও এই বৈঠকে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তারা আসেননি। আবার জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতি নিয়ে কানাঘুষা ‍শুরু হয়।

যদিও অবশ্য জি এম কাদের তার উপস্থিতির মধ্যে রাজনীতি নেই বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। একজন বলেছেন, বৈঠকের কথা তিনি জানতেন না। তিনি ডিনারের আমন্ত্রণে এসেছেন।

যদিও একটি সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাজনৈতিক জোটে জাতীয় পার্টিকে টানতে চায় উদ্যোক্তারা। বুধবারের বৈঠকে জাপার জি এম কাদেরকে লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কথা জানানো হয়েছে। তিনি দলের শীর্ষ নেতাদেরকে বিষয়টি জানানোর কথা বৈঠকে জানিয়েছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে জোট গঠনের কথাবার্তার চেয়ে ইস্যুভিত্তিক যৌথ আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। তবে কেউ কেউ জোট গঠনের বিষয়ও তোলার চেষ্টা করেছেন।

সবশেষ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির আলোকে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পক্ষে মত দেন বি চৌধুরী। এ কথা অন্য নেতারাও সহমত প্রকাশ করেন।

জোট গঠন কবে নাগাদ হতে পারে- এমন প্রশ্নে জেএসডি সাধারণ সম্পাদক বলেন, সবাই আমরা জোট গঠনের বিষয়ে পজিটিভ। আশা করি ভালো কিছু হবে। তবে কবে নাগাদ হবে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু আমরা কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে বসে নিজেদের মধ্যে আরো আলাপ আলোচনা করব।

এদিকে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের বৈঠকে জোট গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জি এম কাদেরের উপস্থিতি এবং কাদের সিদ্দিকীর অনুপস্থিতি সমস্যার তৈরি করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না তবে অপেক্ষা করেন ভালো কিছু হবে। আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। তবে নতুন কিছু করতে চাই।

হঠাৎ করে বৈঠকে জি এম কাদেরের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মান্না বলেন, জি এম কাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনার কথা বলেছি। তারা এখন কী করবে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়া চলছে, তারই অংশ হিসেবে আমরা মিলিত হয়েছিলাম। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপিকে নিয়ে হতাশ হয়েছে, সরকারে ওপরও আস্থা হারিয়েছে। এ কারণে আমরা এই দুই দলের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। জনসম্পৃক্ত এমন অনেক ইস্যু আছে, যেগুলো নিয়ে বিএনপি কাজ করছে না। কিন্তু এসব ইস্যুতেই এখন মাঠে থাকা দরকার। তাই আমরা মাঠে নামার পরিকল্পনা করছি।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!