• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের জন্য কুয়ো কাটলেন ববিতা 


নিউজ ডেস্ক জুন ৩০, ২০২০, ১০:৫০ এএম
মায়ের জন্য কুয়ো কাটলেন ববিতা 

ঢাকা : মা অসুস্থ। শরীরে কষ্ট নিয়ে তাঁকে জল আনতে যেতে হয় তিনশো মিটার দূরে। ছোটবেলা থেকে ওই কষ্ট দেখে মেয়ে স্থির করে, মায়ের জন্য সে তৈরি করবে একটি পাতকুয়ো। নিজের হাতেই। শনিবার সেই কুয়োতে উঠেছে জল। আনন্দের ষোলো কলা পূর্ণ হয়েছে মেয়ে ববিতার।

দীর্ঘ দু’বছরের চেষ্টা আর পরিশ্রমে অসাধ্যসাধন করেছেন ববিতা সোরেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ববিতা এখন গলসিতে বিএড পড়ছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তিনি। রানিগঞ্জের বক্তারনগর রেলপাড়ে তাঁর বাড়ি। ছুটিতে বাড়ি এলে কিছুটা করে মাটি কেটে রাখতেন। তবে তাঁকে সুবিধা করে দেয় লকডাউন। ওই সময় তিনি টানা গর্ত খুঁড়ে গিয়েছেন। অবশেষে এদিন মাটি-পাথরের স্তর ভেঙে বেরিয়ে এসেছে জল। মায়ের কষ্ট দূর করতে জলের জন্য ববিতার লড়াই আজ শেষ হল। সাফল্যের হাসি তাঁর মুখে।

ববিতা বলেন, ‘যেহেতু পড়াশোনার জন্য বর্ধমানে থাকতাম, তাই ছুটির দিন পেলেই বাড়ি ফিরে কুয়ো কাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু এই লকডাউনে বাড়িতে থাকার সুবাদে কুয়োর প্রায় ১৮ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কেটে ফেলেছি। বাঁশের খাঁচা করে দড়ি বেঁধে উঠানামা করেছি। কুয়োতে জলের দেখাও মিলেছে। কিছু দিনের মধ্যে কুয়োর জল ব্যবহারও করতে পারব।’

ছোটবেলা থেকে মাকে জলের জন্য কষ্ট করতে দেখেছেন। বাড়ি থেকে বহু দূরে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে, তবে মিলত এক কলসি জল। ছোট থেকে মায়ের সেই কষ্ট বিচলিত করত ছোট্ট ববিতাকে। বক্তারনগরে আধিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি ববিতাদের। মা-বাবা, এক ভাই আর দুই বোন নিয়ে তাঁদের পরিবার। বাবা সামান্য বেতনে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ভাই গাড়িচালকের কাজ করে। স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করে দিদি। বাড়িতে নলকূপ বসানোর কথা ভাবা হলেও বাবার স্বল্প আয়ে তা হয়ে ওঠেনি। এমনিতেই মেপে চালাতে হয় সংসার। পড়ার খরচও রয়েছে। রানিগঞ্জ থেকে বর্ধমান যাতায়াত, সেখানে থাকার খরচও কম নয়। তাই এক দিন ববিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, বাড়িতে নিজেই পাতকুয়ো করবেন। পড়াশোনা করে জেনে নেন, ওই এলাকায় ভূগর্ভের ১৮-১৯ ফুট নীচে মিলবে জল।

মেয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রথমে কুয়ো খোঁড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন বাবা হপনা সোরেন। আজ মেয়ের এমন কাজে খুশি ঝরে পড়ছে তাঁর মুখে। ‘জলের অভাবে সে ভাবে স্নান করতেও পারতাম না। আমার মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল। কিন্তু ওর যে এত মনের জোর, এত বড় একটা কুয়ো কেটে ফেলবে, বুঝে উঠতে পারিনি। তাই খুব আনন্দ হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

তবে বর্ধমান থেকে বাড়িতে এসে ছুটির ফাঁকে একটু একটু করে ৬ ফুটের মতো গর্ত করেছিলেন ববিতা। তার পর লকডাউনে বাড়িতে থাকার সময় কাজের গতি বাড়ান। ববিতাকে সাহায্য করেন দিদি। মা নিনা সোরেন বলেন, ‘আমার কষ্ট দেখে মেয়ে যে এত বড় কাজ করবে কোনও দিন ভাবতেই পারিনি। আর আমাকে অত দূরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে জল আনতে হবে না।’

পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউড়ি বলেন, ‘অত্যন্ত গর্ব হচ্ছে। আমার জেলার এক জন আদিবাসী শিক্ষিতা মেয়ে এ ভাবে মায়ের দুঃখ দেখে কুয়ো কেটে ফেলল, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।’

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!