• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার চলতে দিতে হবে অর্থনীতির গতিপ্রবাহের স্বার্থে

সবল টাকায় দুর্বল দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:৩০ পিএম
সবল টাকায় দুর্বল দেশ

ঢাকা : টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। কেবল ডলারের বিপরীতে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় রুপির সঙ্গেও। তবে দেশটি তাদের মুদ্রা রুপিকে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমন্বয় করছে।

এখন ভারতীয় এক টাকায় মিলছে ভারতের শূন্য দশমিক ৮৫ রুপি, যা ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি শূন্য দশমিক ৭৫। এভাবেই ভারত তার রুপিকে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে যেন রপ্তানি আর রেমিট্যান্স উৎসাহিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার মান কিছুটা দুর্বল করলে দেশ সবল হবে। অন্যথায়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি বেড়ে যাচ্ছে। এতে দেশের উদ্যোক্তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত পণ্য আর সেবাকে আমাদের জন্য সস্তায় পরিণত করছে। এতে এদেশের কারখানা আর কর্মসংস্থান ক্ষতিতে পড়ছে। এটি হিসাব করা হচ্ছে না। আপনি ১০০০ টাকার নোট কলকাতায় দিয়ে ৮৫০ রুপি নিয়ে কি মজা করেই না বাজার করছেন। আর আমার দেশের দোকানগুলো দিন শেষে তার কর্মচারীদের নাস্তা আর হাত খরচের টাকা ড্রয়ার থেকে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখনই ভাবতে হবে। টাকাকে আর একটু দুর্বল করলে দেশ সবল হবে। পাচারও কমবে আশা করা যায়।

এদিকে মুদ্রা শক্তিশালী হলে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমার কথা। সেটিও হচ্ছে না। বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় ডলারের দামও। বিপুল সংকট থাকায় এ মুদ্রার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। যদিও একই জায়গায় আটকে আছে ডলারের দাম। এর নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ। চাহিদার কারণে ডলারের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও অর্থনীতির জন্য জরুরি হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাকে কার্যকর করা।

ডলারের দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণে পুড়ছে অর্থনীতি। বাজার ব্যবস্থার ওপরে ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হয় ২০০৩ সালে। এরপর ডলারের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হওয়ার কথা। সারা বিশ্বেই তা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অদৃশ্য উপায়ে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে বাজার ব্যবস্থা সচল নয়। এতে অর্থনীতিতে এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে।

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ না করলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ঘাটতি রয়েছে, তার জন্য হয়তো ডলারের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু এতে রপ্তানিকারকরা উৎসাহিত হবেন। বাড়বে প্রবাসী আয়।

বাজার ব্যবস্থার ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দিলে প্রবাসীরা আরো বেশি অর্থ পাঠাবে, যা অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। সরকার প্রবাসী আয় বাড়াতে যে নগদ সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করছে, সেটিও প্রয়োজন হবে না। এতে সরকারের রাজস্ব ব্যয় কমবে।

অন্যদিকে রপ্তানিকারকরাও লাভবান হবেন এখান থেকে। ফলে তারাও রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নেবেন। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত হবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের দাম আমরা বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। এটি চাহিদা ও জোগানের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে দাম হয়তো কখনো বাড়বে কিংবা কমবে। সামান্য ওঠানামা করতেই পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাম কিছুটা বাড়বে হয়তো। কিন্তু এতে প্রবাসীরা সুবিধা পাবেন। রপ্তানিকারকরা লাভবান হবেন।

অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমবে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কর্মকাণ্ড বাড়বে। দেশীয় শিল্পগুলো সুরক্ষা পাবে। অর্থনীতির সার্বিক গতিপ্রবাহের স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার চলতে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের বাজার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখানে বাজার ব্যবস্থা কার্যকর। পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাজারকে স্থিতিশীল রাখে। তবে এখানে হয়তো কিছুটা ছাড় আসতে পারে। সেটা বিবেচনায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়লে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নগদ সহায়তা দেয়, সেটি না দিলেও চলবে। এটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যেকোনো সময় প্রত্যাহার করা যায়। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পরোক্ষভাবে ডলারের বাজারে নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। বরং এটি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ ডলার ছাড়তে হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ দীর্ঘায়িত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ব্যবস্থাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এ পরিস্থিতি হলে পুরো বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতেই পর্যাপ্ত ডলারের মজুত থাকতে হবে। এতে কারসাজি করতে সাহস পাবে না অসাধু চক্র। অন্যথায় দেখা যাবে কারসাজি চক্র বিপুল পরিমাণ ডলার বের করে নিয়ে মজুত করবে লাভের আশায়। ডলারের দাম কিছুটা বাড়লে মূল্যস্ফীতি হতে পারে এমন শঙ্কা থাকলেও বাজেটের অন্য নীতি দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা প্রতিদিন এই ডলারের দাম অঘোষিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা প্রতিদিন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে কাজটি করে থাকেন। এতে বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রুপির দরপতনে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী ভারত থেকে পণ্য কিনে দেশের বাজারে বিক্রি করছেন। বিশেষ করে পোশাক, প্রসাধনীসহ নারী ও শিশুদের ব্যবহারের জিনিস ব্যাপক হারে আমদানি বেড়ে গেছে। এতে দেশের অনেক ছোট ছোট উদ্যোক্তা টিকতে পারছেন না। কারণ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ক্রেতাদের বিদেশি পণ্যের দিকে ঝোঁক রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!