• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্থবিরতা কাটবে আবাসন খাতে


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১১, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম
স্থবিরতা কাটবে আবাসন খাতে

ঢাকা : দেশের আবাসন খাতে সঙ্কট কাটছে। অর্থনীতিতে অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে স্থবিরতা কেটে গতি আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা আবাসন সমস্যা সমাধানে এ খাত সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আসা জরুরি। দিতে হবে নীতি সহায়তা। প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে যাতে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অর্থ পাচার বাড়বে। সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ নিতে অনেকে অর্থ পাচার করবে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদ্যমান সমস্যাগুলো অনুধাবন করে সমাধান করতে আসন্ন বাজেটে উদ্যোগ নেবেন।   

সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এ আবাসন খাতের সরাসরি অবদান ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পের অবদান যোগ করলে জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান বেড়ে দাঁড়াবে ১২ শতাংশের ওপরে। একই সঙ্গে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এই খাত, যাদের ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি মানুষ। সরকারের সঠিক নীতি সহায়তা পেলে এই খাতের আরো প্রসার ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পেতে পারে এই খাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

সূত্র বলছে, দেশে ঝুঁকিমুক্ত, পরিবেশবান্ধব একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোল জরুরি। বর্তমান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর একটি হিসাব বলছে, গত তিন দশকে দুই লাখের বেশি ফ্ল্যাট ও এক লাখ প্লট গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রশ্ন। সরকার এই খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এলেও বিভিন্ন সংস্থা পরে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের মুখে ফেলছে। তাদের ব্যাংক হিসাব, টাকার উৎস জানতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তাই গ্রাহকদের একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য অর্থের উৎস প্রদর্শন যাতে না করতে হয় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৯-এর বি পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। এটি করা না হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাবে। এই খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য ভবিষ্যতে যাতে কোনো সংস্থা প্রশ্ন না তুলতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ভয় থেকে অনেকে বিদেশে সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ নিয়ে অর্থ পাচার করছে।

সূত্র বলছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে দেশে ফ্ল্যাট ও প্লট বেচাকেনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এতে এই খাতে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, যা বন্ধ করতে হবে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নথি জব্দ করছে। এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, নানাবিধ কারণে রাজধানীসহ দেশের অন্য শহরগুলোতে মানুষ বাড়ছে। নগরমুখী মানুষের এই স্রোত সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকায়।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ নগরবাসী ছিল। ২০১১ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশের নগরায়ণের হার এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নগরীর মধ্যে ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি হারে। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকা এখন অন্যতম।

 জাতিসংঘের তৈরি ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন  প্রসপেক্টাস : দ্য ২০১৪ রিভিসন’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশ্বের ষষ্ঠ জনবহুল নগরী। আর শহরমুখী মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের একটি ফ্ল্যাট বা প্লট নিয়ে থাকার আগ্রহ বাড়ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিটি নাগরিক যাতে ভাড়ার টাকায় অন্তত তাদের একটি ঠিকানা খুঁজে পায় সেদিকে লক্ষ্য এবার।

সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্প এই খাতের সঙ্গে জড়িত। এই খাতগুলোর প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের জিডিপিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ৭ শতাংশ।

সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে এই খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার ঘোষণা আসতে পারে। এতে গতি সঞ্চার হবে এই খাতে। বাড়বে গ্রাহকের উৎসাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা  থেকে ধীরে ধীরে এই খাত বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫ শতাংশ সুদের গৃহঋণ চালু করার পর এই খাত স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা আশা দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সব নাগরিকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার এই খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখা আবাসন শিল্পে নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়ে আনা এই খাতের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। নতুন বাজেটে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।  

দশ তলার ওপরে একটি ভবন নির্মাণ করতে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, ডিএমপি, পরিবেশ অধিদফতর, তিতাস, ডেসকো, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সিভিল এভিয়েশনসহ মোট ১১ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আবাসন খাতের প্রসারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ওসামা তাসীর এ ব্যাপারে বলেন, আবাসন খাতের বিকাশে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। গুলশান, বারিধারাসহ ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলে জমির মূল্য গত একদশকে ২ থেকে ৩ গুণ বেড়েছে। নির্মাণসামগ্রী যেমন বালি, সিমেন্ট, রডের দাম বেড়েছে ২ থেকে আড়াই গুণ। ফলে জমি বেচাকেনায় অনেকে প্রকৃত মূল্য দিচ্ছেন না। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন এ ব্যাপারে বলেন, অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান বিবেচনা করে এই খাতের দিকে সরকারের নজর প্রত্যাশা করি আমরা।

আমাদের প্রত্যাশা, আগামী বাজেটে সরকার এই খাতের জন্য ভালো কোনো খবর দেবে। বিশেষ একটি স্বল্প সুদে গ্রাহকরা যাতে ঋণ পান এটি খুবই জরুরি। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি রয়েছে।

এছাড়া জমি কিংবা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কমাতে হবে। কমালে গ্রাহকরা প্রকৃত মূল্য ঘোষণা দিয়ে সরকারকে আরো বেশি রাজস্ব জোগান দেবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!