• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ রাজপথে উত্তাপ ছড়ালো বিএনপি


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৯:১৭ পিএম
হঠাৎ রাজপথে উত্তাপ ছড়ালো বিএনপি

ঢাকা: রাজধানীতে অনেকদিন পর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে উত্তাপ ছড়ালো বিএনপি। সোমবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে কটাক্ষ করার পরদিনই হঠাৎ করে রাজপথ উত্তপ্ত করলো দলটি। 

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’ ব্যানারে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে প্রতিবাদ আলোচনা সভা কর্মসূচি ছিল।

এদিন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত এতে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান সঞ্চালনা করেন। এতে অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর, শিরিন সুলতানা, বিএফইউজের (একাংশ) নেতা রুহুল আমিন গাজী, সভাপতি শওকত মাহমুদ, ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি কাদের গণিসহ অন্যরা। এরপর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষ করে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ব্যানারে হাইকোর্ট অভিমুখে একটি মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। 

মিছিলে নেতৃত্ব দেন আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহ মো. আবু জাফর। অসুস্থতার কারণে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। দুপুর ১২টার পর থেকে হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। 

পরে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ভীড় বাড়তে থাকে। বেলা ২টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভে বাধা দেয়। পুলিশ অঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরাতে চাইলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দেয় চরম আতঙ্ক। বিক্ষোভ মিছিলটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে হাইকোর্টের ম‚ল ফটকের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেখানে নেতাকর্মীরা এক পর্যায়ে অবস্থান নিয়ে রাজপথ ও আশপাশের ফুটপাতে বসে পড়েন। 

প্রায় দেড়/দুই ঘণ্টা পুলিশি বাধার মুখেও নেতাকর্মীরা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখে বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা উত্তপ্ত করে রাখেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কটিতে সব ধরনের যান চলাচল এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। আগে থেকেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল। এক সময় মৎস্য ভবনের দিক থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ হাইকোর্টের সামনে আসে। পুলিশি ঘেরাওয়ের মধ্যেও নেতাকর্মীরা অবস্থান ধরে রাখে। 

এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জনগণ রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক হওয়া সত্তে¡ও আজ সব কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের ভোটের অধিকার নেই, গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। দেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যম‚ল্য ঊর্ধ্বগতি। পেঁয়াজ, চাল, তেল জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের বিরোধী দলের আন্দোলন করার অধিকার আছে। জনগণের জন্য রাজপথে নামা সাংবিধানিক অধিকার। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করার অধিকার আমাদের আছে।

তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যম‚ল্য ঊর্ধ্বগতি হয়েছে তা নিম্নগামী করুন এবং দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছে আর তার জন্য পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দিন। 

এরপর পরই পুলিশ অবস্থান নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে তৎপর হয়। শুরু হয় ধাক্কা-ধাক্কি, ধাওয়া, লাঠিচার্জ। বিএনপির কর্মীরাও দিগ্বিদিক ছুটতে ছুটতেই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় তারা বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে। একটি কালো রঙের বিএমডব্লিউ, চারটি সাদা গাড়ি, ছাই রঙের একটি টয়োটা প্রিমিও, কয়েকটি পিকআপ, নোয়া মাইক্রোবাসসহ আরও কিছু গাড়ি বিএনপি কর্মীদের ভাঙচুরের শিকার হয়। 

এদিকে, পুলিশের ধাওয়া ও লাঠিপেটায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার পর পুলিশ বেশ কিছু টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাটিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। 

এ বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিক্ষোভে অংশ নেয়া অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা জানান, পুলিশের অতর্কিত ধাওয়া, লাঠিপেটা ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সময় অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। 

পুলিশি হামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরও নেতাকর্মী আহতদের তালিকায় আছেন। 

এদিকে, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি শেখ মো. শামীম বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা বিনা অনুমতিতে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করছিল। জনগণের ভোগান্তি যেন না হয় সেজন্য আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। তারা আমাদের পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আমরা কিছু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছি। 

জানা যায়, মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই হাইকোর্ট অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে গেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ‘রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’র ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের প্রকাশ্য কর্মসূচি থাকলেও সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান নেয়ার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেতাদের ছিল। 

এদিকে, কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এক নেতা জানান, প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় অংশ নিতে গত চারদিন আগেই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেদিনই হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির বিষয় সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়। 

এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, হয়ত টেকনিক্যাল কারণে অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে আপনাদের (গণমাধ্যম) জানানো হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!