• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেসি নেইমারদের কাঁদিয়ে সেমিতে জুভেন্টাস


ক্রীড়া ডেস্ক এপ্রিল ২০, ২০১৭, ০৯:৫৪ এএম
মেসি নেইমারদের কাঁদিয়ে সেমিতে জুভেন্টাস

ঢাকা : নাহ্! এবার আর নিজেদের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারলো না বার্সেলোনা। প্রতিদিন অলৌকিক কিছু ঘটেও না। প্রতিটি দলই পিএসজির মতো ভুল করে না। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা প্রতিদিনই আসুরিক শক্তিতে জ্বলে উঠতে পারেন না, যেমনটি তাঁরা পিএসজি ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন। ইতিহাসও প্রতিদিন গড়া যায় না। যায় না বলেই চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিদায় ঘটে গেল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।

এক সপ্তাহ আগে তুরিনে জুভেন্টাসের কাছে ৩-০ গোলে হেরেই বার্সেলোনার বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। বাকি ছিল কেবল দ্বিতীয় লেগের আনুষ্ঠানিকতা। অলৌকিক কিছুর অপেক্ষা। আজ ন্যু ক্যাম্পে সেই আনুষ্ঠানিকতা, সেই অপেক্ষার শেষ হলো। জুভেন্টাস উঠে গেল শেষ চারে। ম্যাচের স্কোরলাইন ০-০ হওয়ায় ৩-০ গোলের ব্যবধানেই বার্সাকে টপকে ইউরোপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে শেষ চারে জুভেন্টাস।

তিন গোলের ঘাটতি মেটাতে মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালালে কি হবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট সব শটে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক জানলুইজি বুফ্ফনের তেমন পরীক্ষাই নিতে পারেনি বার্সেলোনার এমএসএন ত্রয়ী। সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন দলের সবচেয়ে বড় ভরসা লিওনেল মেসিই। শট, ভলি বা ফ্রি-কিক কোনটাই লক্ষ্যেই রাখতে পারেননি আর্জেন্টিনার এই তারকা ফরোয়ার্ড।

ত্রয়োদশ মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকেই নেওয়া গনসালো হিগুয়াইনের শট লক্ষ্যে থাকেনি। চার মিনিট পর প্রথম ভালো সুযোগটা নষ্ট হয় মরিয়া হয়ে আক্রমণে ওঠা বার্সেলোনার। মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে পা লাগাতে পারেননি জর্দি আলবা।

১৯তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে মেসির শটে বল ডান পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর আলবার ক্রস থেকে এবার নেইমার নেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। ৩০তম মিনিটে মেসির শট ফিরিয়ে ম্যাচে প্রথম সেভ করেন এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের নয় ম্যাচে মাত্র দুইবার গোল খাওয়া জানলুইজি বুফ্ফন। আট মিনিট পর অপর প্রান্তে বিপজ্জনক জায়গায় থেকে হিগুয়াইনের ভলি ঠেকাতেও কোনো সমস্যা হয়নি মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের।

বিরতির খানিক আগে বাঁ দিক থেকে নেইমারের ক্রসে সুয়ারেস চেষ্টা করেছিলেন বাইসাইকেল কিক করার; কিন্তু বলে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার। দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে ডান দিক থেকে হুয়ান কুয়াদ্রাদোর কোনাকুনি শট দূরের পোস্টের কিছু বাইরে দিয়ে যায়। পরক্ষণেই ইউভেন্তুসের ডি-বক্সে ঢুকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন নেইমার।

দুই মিনিট পর নেইমারের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকেই মেসির শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। ৫৮তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় পাওয়া ফ্রি-কিকেও ক্রসবার উঁচিয়ে মারেন মেসি।

৬৬তম মিনিটে কর্নার থেকে বল বিপদমুক্ত করতে গোল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বুফ্ফন। মেসি যখন বল পেলেন তখন ফিরতে পারেননি ইতালির এই গোলরক্ষক। কিন্তু এবার আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ভলি গেল ক্রসবার উঁচিয়ে। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত অতিথিদের রক্ষণকে তখনই কেবল খানিকটা নড়বড়ে মনে হয়েছে।

শেষের দিকে বার্সেলোনার প্রায় সবাই উপরে উঠে আসায় পাল্টা আক্রমণে কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল ইউভেন্তুস। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়াতেই লক্ষ্য ছিল সেরি আ চ্যাম্পিয়নদের। ৭৫তম মিনিটে প্রথম লেগের ম্যাচের নায়ক কিন্তু এই ম্যাচে অনুজ্জল পাওলো দিবালা ও পরে হিগুয়াইন আর ডান উইং দিয়ে প্রায়ই আক্রমণে ওঠা কুয়াদ্রাদোকে তুলে নিয়ে রক্ষণে আরও জোর দিয়েছেন আল্লেগ্রি। ফুটবলে সৌন্দর্য যে শুধু আক্রমণেই না, ইউভেন্তুস কোচের দাবিমতো রক্ষণেও, তার খানিকটা প্রমাণ রেখেছে বৈকি তার শিষ্যরা।

তবে বলের ৬৫ শতাংশ দখল রেখেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটের মহড়ায় বার্সেলোনা আজ গোটা ম্যাচে গোলে শট নিয়েছে ১৯টি। কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে মাত্র একটি। জুভেন্টাসের সাফল্য ছিল তারা বার্সেলোনাকে জায়গা করে দেয়নি। বার্সেলোনার প্রতিটি গোলের প্রচেষ্টাই ছিল কিছুটা দুরূহ কোণ থেকে। এই ম্যাচের আগে ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ৪ ম্যাচে বার্সেলোনার গোল সংখ্যা ছিল ২১টি। জুভেন্টাসের রক্ষণের শক্তিটা বোঝা যাবে এখানেই। কিয়েলিনি কিংবা বনুচ্চি—দুজনেই দুর্দান্ত ছিলেন আজ। কিন্তু গোটা দলটাকেই একটা দেয়ালের সঙ্গে তুলনা করা যেতেই পারে। বার্সেলোনা তাদের সর্বস্ব দিয়েই আক্রমণে ঝাঁপিয়েছে। কিন্তু মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের আক্রমণভাগের বিপক্ষে দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১৮০ মিনিট গোল না–খাওয়া জুভেন্টাস সেমিফাইনালে খেলছে নিজেদের শক্তিমত্তা সবাইকে জানিয়েই। গত ৫০টি ম্যাচে এটি বার্সেলোনার প্রথম গোলশূন্য ড্র।

২০১৪-১৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল ইউভেন্তুস। কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে প্রতিশোধটা নিয়ে নিল মাস্সিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির দল।

পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলোয় চার গোলের ঘাটতি মিটিয়ে এই কাম্প নউতেই ইতিহাস গড়া ৬-১ গোলের জয়ে শেষ আটে উঠেছিল লুইস এনরিকের দল। ইউভেন্তুসের বিশ্বসেরা রক্ষণের দৃঢ়তায় এবার অবিস্মরণীয় কোনো জয় দেখতে পেল না স্বাগতিক দর্শকরা। তবে শেষ বাঁশি বাজার খানিক আগে থেকেই পতাকা উড়িয়ে, গান গেয়ে দলের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে গেল তারা। তবে তাতে কি আর নুইয়ে পড়া বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের কষ্ট কমে। কান্নায় ভেঙে পড়া স্বদেশী নেইমারকে সান্ত্বনা জানাতে এগিয়ে আসতে হলো বার্সেলোনা ছাড়ার পর প্রথমবারের মতো কাম্প নউতে খেলতে আসা দানি আলভেসকে।

ইউভেন্তুসের বাকি খেলোয়াড়রা তখন আনন্দে লাফাচ্ছে। ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে পৌঁছা দলটির সঙ্গী স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও ফ্রান্সের মোনাকো।

ডর্টমুন্ডকে হারিয়েই শেষ চারে মোনাকো

প্রথম লেগের মতো ফিরতি পর্বেও জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছে মোনাকো। বুধবার রাতে ঘরের ম্যাঠে ৩-১ গোলে জিতেছে মোনাকো। ডর্টমুন্ডের মাঠে ৩-২ গোলে জিতেছিল ফরাসি ক্লাবটি।

ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরুর দিকেই দুই গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মোনাকো। তৃতীয় মিনিটে ফরাসি ফরায়ার্ড এমবাপের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সপ্তদশ মিনিটে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলম্বিয়ার স্ট্রাইকার রাদামেল ফালকাও।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান কমান জার্মান মিডফিল্ডার মার্কো রয়েস। তবে ৮১তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করে ফেলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড ভ্যালে জেরমাঁ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!