• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লু হোয়েল স্বর্ণা: মৃত্যুর আগে যা লিখেছিল 


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৯, ২০১৭, ১২:৩৬ পিএম
ব্লু হোয়েল স্বর্ণা: মৃত্যুর আগে যা লিখেছিল 

ঢাকা: ভার্চুয়াল গেইম ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে রাজধানীতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা খুব মেধাবী ছিল। সে রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ হায়ার সেকেন্ডারি গার্লস স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিল। ক্লাসে বরাবরই ফাস্ট হতো স্বর্ণা। তার পরিবারের দাবি ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়েই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার রাজধানীর ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসার ৫বি ফ্ল্যাটের বাসা থেকে দিকে স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। 

রাশিয়ান এক তরুণের তৈরি করা এই গেমে ৫০টি ধাপ রয়েছে। আর শেষ ধাপটি হলো আত্মহত্যা করা এবং মারা যাওয়ার আগে একটি সুইসাইড নোট লিখে যাওয়া। আর সুইসাইড নোটের এক পাশে একটি চিহ্ন এঁকে দেয়া।

স্বর্ণার লাশ যে ঘর থেকে পাওয়া যায়, সেই ঘরে তার পড়ার টেবিলের ওপর একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে, যা স্বর্ণা মারা যাওয়ার আগে লিখে গেছে বলে তার বাবা আইনজীবী সুব্রত বর্ধন জানিয়েছেন।

স্বর্ণার সুইসাইড নোট

সুইসাইড নোটে বড় বড় করে লিখা আছে, NO ONE IS RESPONSIBLE FOR MY DEATH, অর্থাৎ আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আর এই লেখাটির ঠিক পাশেই ছিল একটি হাসির চিহ্ন আঁকা, যা থেকে দেখা যায় যে এটি ব্লু হোয়েল গেমসের ৫০ নম্বর ধাপ।

স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্ধন বলেন, ‘আমার মেয়ে রাত জেগে ফোন ব্যবহার করত। মোবাইলে কী করছে, দেখতে চাইলে দিত না। রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কী যেন করত। দেখতে চাইলেও দিত না। গোপন করত।’

সুব্রত বলেন, ‘গত ১৫ বা ২০ দিন আগে আমি স্বর্ণার মোবাইল চেক করলে চাইলে সে অভিমান করে। এর পর আমি তার মাকে বলি মোবাইলটা নিয়ে রেখে দেয়ার জন্য। দুদিন তার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে রেখে দেয়া হয়। ওই দুদিন ও খুব মন খারাপ করে। কথা বলা বন্ধ করে দেয়।’

বাবা মা ও ছোট ভাইয়ের সাথে স্বর্ণা

‘স্বর্ণা তার মাকে বলত, আমাকে তোমরা বিশ্বাস করো না। আমি সব সময় স্বর্ণাকে বুঝাতাম, কোনো দিন মারধর করিনি। তাকে কাউন্সেলিং করতাম। আমি একদিন রাত ৩টায় চুপ করে তার রুমের দরজা খুলে দেখি, ও মোবাইলে কী যেন দেখছে। আবার কাজও করছে সেখানে। আমাকে দেখেই সে মোবাইলটা লুকিয়ে ফেলতে চায়। আমার মনে হয়েছে, আমি তার কক্ষের ঢোকার মুহূর্তেই সে কিছু গোপন জিনিস ডিলিট বা সরিয়ে ফেলেছে।’

‘আমার মেয়ের মুখে কোনোদিন আমি এই ব্লু হোয়েল গেমটির নাম শুনি নাই। কিন্তু মারা যাওয়ার দিন আমি এ সম্পর্কে শুনি। বাসায় ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন বলে মনে হয়, স্বর্ণা ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত ছিল। 

আমার তো কোনো কিছুর অভাব নেই, যখন যেটা চাচ্ছে তখন সেটাই পাচ্ছিল। আমি তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখি নাই। কেবল লক্ষ করতাম যে, রাত জেগে সে ফোন ব্যবহার করত। আর কিছুদিন থেকে ও শুধু ছাদে যেতে চাইত।’

সুব্রত বলেন, ‘ছাদে ও একা একা ঘুরত। এমনকি হঠাৎ হঠাৎ করে ওর ছাদে যাওয়ার নেশা উঠত, বলত পাপা, কী সুন্দর আকাশে চাঁদ উঠছে, চল ছাদে যাই। রাত ১১টার পরে অনেকবার আমি নিজেই ওকে ছাদে নিয়ে গেছি। পূর্ণিমার চাঁদ তার খুব পছন্দ ছিল।’

বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন সুব্রত। তিনি বলেন, ‘স্বর্ণার ঘরের লক লাগানো থাকত না। ওই দিন ভোর ৬টার দিকে ওর মা ঘুম থেকে ওঠার পরে তার রুমের লক লাগানো দেখতে পায়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে সে চাবি দিয়ে দরজা খোলে। এরপর দরজা একটুখানি খুলেই মেয়েকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় নাইলনের ওড়নায় পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে ওর মা। 

আমি গিয়ে দেখি, খাটের ওপর বসানো একটি চেয়ার পড়ে আছে। চেয়ারটি খাটের পশ্চিম পাশে নিচে পড়লেই কাজের মেয়েটি জেগে উঠত। তা যাতে না হয় এবং কোনো শব্দ যাতে না হয়, সে জন্য বিছানার ওপর ফেলা হয়েছে চেয়ারটি।’

সুব্রত বলেন, ‘আমি দ্রুত ওড়না কেটে মেয়েকে নিচে নামিয়ে খাটের ওপরে শুয়ে দিই। ওর জিহ্বা বের করা ছিল, আর চোখগুলো কেমনভাবে যেন তাকানো অবস্থায় ছিল। আর এই ওড়না আমি সিঙ্গাপুর থেকে কিনে এনেছিলাম।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!