• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নমনীয় বাচ্চু, খান আতাউর প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিলেন 


বিনোদন প্রতিবেদক অক্টোবর ১৬, ২০১৭, ০৫:৪৮ পিএম
নমনীয় বাচ্চু, খান আতাউর প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিলেন 

ঢাকা: সম্প্রতি প্রখ্যাত পরিচালক, অভিনেতা ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন নাট্যজন ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। নিউইয়র্কে সাংস্কৃতিক অভিবাসীদের সমাবেশে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন,‘আবার তোরা মানুষ হ’ এটাতো নেগেটিভ ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের বলছে, আবার তোরা মানুষ হ।’

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বেশ সরগরম হয়ে ওঠে। নায়ক ফারুক বাচ্চুর কথার কঠোর সমালোচনা করেন। খান আতাইর রহমানের ছেলে আগুনও সাংবাদিক সম্মেলনের হুমকি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গটি নিয়ে এবার বিশদ বললেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ প্রসঙ্গে কিছুটা নমনীয় হয়ে ব্যাখ্যা দেন তিনি। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ১৭ মে তারিখের দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার অংশ, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বেতার ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি কাগজ উপস্থাপন করেন।

তিনি লেখেন, ‘বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে অপারগ হয়েছিলেন। যে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী ১৯৭১-এর ১৭ মে মুক্তিযুদ্ধকে ‘আওয়ামী লীগের চরমপন্থীদের কাজ’ বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিলেন দুঃখজনকভাবে খান আতাউর রহমান তার ৯ নম্বর সাক্ষরদাতা ছিলেন।’

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেন নাসির উদ্দিন। লেখেন, ‘১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ড. নীলিমা ইব্রাহীমকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্তানিদের প্রচারকার্যে সহযোগিতাকারীদের সনাক্ত করার জন্য। ১৯৭২-এর ১৩ মে নীলিমা ইব্রাহীম কমিটি যে তালিকা সরকারকে পেশ করেন সে তালিকায় ৩৫ নম্বর নামটি খান আতাউর রহমানের। তালিকাভুক্তদের সম্পর্কে কমিটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তালিকাভুক্ত শিল্পীদের ৬ মাস পর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ পুনর্বিবচনার সুপারিশ করা হয়।’

এরপর নিজের বক্তব্য পক্ষে অবস্থান আবারও পরিষ্কার করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। বলেন, ‘‘একথা অনস্বীকার্য যে, খান আতাউর রহমান একজন গুণী শিল্পী। তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নাই। মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালে তার চলচ্চিত্রসমূহ আমাদের ঋদ্ধ ও উজ্জীবিত করেছে । যেমন- ‘সোয়ে নাদীয়া জাগো পানি’, ‘নবাব সিরাজদৌলা’সহ অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। 

তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আবার আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান, শহীদউল্লাহ কায়সারের মতো শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের স্বীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন উদ্রেক হয়েছে যে, ৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অব্যহতিতে কেন আমি বা আমরা তাকে রক্ষা করেছিলাম।

কারণ খান আতাউর রহমান কোনোপ্রকার মানবতাবিরোধী কর্মে লিপ্ত ছিলেন না। যদিও পাকিস্তানিদের সমর্থনে রেডিও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন। আর খান আতাউর রহমান একজন শিল্পী এবং ৯ মাসে তার কর্ম সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। তাছাড়া আমরা এও ভেবেছি, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অনেকে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করেছেন।

আমরা তা বিচারের এখতিয়ার রাখি না। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের এ কথা বাধ্যতামূলক মানতে বলা হয়েছিল যে, কোনও অবস্থাতেই যুদ্ধোত্তর সময়ে কাউকে ক্ষতি বা আঘাত করা যাবে না। বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্তদের বিচার করা হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। মুক্তিযোদ্ধারা সেই আদেশ পুরোপুরি ভাবে মেনেছিলো বিধায় যুদ্ধোত্তর সময়ে প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়েছিল।

জেনেভা কনভেনশন মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি মেনেছিলো। আমার মূল বক্তব্যে নয়, একটি প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাসের দায় থেকে আমি খান আতাউর রহমান সম্পর্কে উক্তিটি করেছিলাম। সবশেষে আবারও বলছি, খান আতাউর রহমান একজন সৃষ্টিশীল মানুষ কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ব্যক্তিগতভাবে আমার তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নাই। শিল্পী হিসেবে তার প্রশংসা করি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে তার ভূমিকার সমালোচনা তো করতেই পারি।’
এদিকে নাসির উদ্দিন ইউসুফ এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার ( ১৭ আক্টোবর) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!