• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েরা সাবধান, শারীরিক সম্পর্কই ওদের টার্গেট! 


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৪, ২০১৭, ০৬:৫৯ পিএম
মেয়েরা সাবধান, শারীরিক সম্পর্কই ওদের টার্গেট! 

ঘটনা-১

ঘটনাটি ২০১৫ সালের। প্রথমে মোবাইল ফোনে রং নম্বরে পরিচয়। এরপর ধিরে ধিরে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব থেকে গভীর প্রেম। এ প্রেমের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের লোভে প্রেমিকাকে পতিতালয়ে বিক্রি। এমনই এক ঘৃনিত কাজ করেছে রাজীব (৩০) নামে এক লম্পট। 

আর এ নির্মমতার শিকার হয়ে ২৪ দিন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অন্ধকার জীবনে থাকার পর মুক্তি পায় ওই তরুণী (৩০)। 

জানা গেছে, খুলনার রূপসায় হোসেনপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ওই তরুণী। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে ঢাকা নবীনগর একটি গার্মেন্টেসে কাজ শুরু করে। 

এ সময় রাজীব নামে এক ব্যক্তির সাথে তার ফোনে যোগাযোগ হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে রাজীব তরুণীকে বিয়ের প্রলভোন দেখিয়ে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে দেখা করে। ওই তরুণীকে তার বড় বোনের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে সরাসরি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে। 

সেখানে মোটা অংকের টাকায় তাকে বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে যায় ওই লম্পট। এরপর থেকে ওই তরুণীকে দিয়ে জোরপুর্বক দেহ ব্যবসা চালানো হচ্ছিল। এভাবে ২৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার ঘরে আসা এক খদ্দেরের মোবাইল ফোন থেকে বিষয়টি তার পরিবারের কাছে জানায়।

ঘটনা-২

ঢাকা: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের তেলিনা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে পার্শ্ববর্তী চিতেশ্বরী গ্রামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩ নভেম্বর ওই যুবক মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর সে উধাও হয়।

দুই দিন পরও মেয়েকে না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর মেয়েটির বাবা মির্জাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে পুলিশ কৌশলে মেয়েটিকে চিতেশ্বরী গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

মির্জাপুরের দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. আলাউদ্দিন জানান, ১২ নভেম্বর মেয়েটিকে টাঙ্গাইলের ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ওই যুবক তার অমতে তাকে ধর্ষণ করেছে বলে জবাববন্দি দিয়েছে। 

ঘটনা-৩

মায়ের সঙ্গে দুই বোন ফরিদপুর শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। মা হোটেলে কাজ করেন। স্থানীয় অপু নামে এক ছেলের সঙ্গে তাদের এক বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। 

চলতি বছরের জুন মাসের একদিন বিকেলে অপুর সঙ্গে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রী ঘুরতে যায়। শহরের আলীপুর রেললাইন এলাকায় অপুসহ সাত-আটজন তরুণ তাকে ধর্ষণ করেন। স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে গেলে ওইদিন রাত একটার দিকে বাসার সামনে রেখে পালিয়ে যান অপু। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। 

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৮) ফরিদপুর ক্যাম্পের কমান্ডার মো. রইসউদ্দিন বলেন, আলীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই তরুণকে আটক করা হয়। আটক দুজন হলেন- আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন (১৯) ও উজ্জ্বল শিকদার (২৬)।

ঘটনা-৪

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকনের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন সোহাগ। গতবছরের ডিসেম্বরে ওই ছাত্রীকে কৌশলে ধর্ষণ করেন তিনি। গোপনে সোহাগের সহযোগীরা ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। 

৩১ ডিসেম্বরে ওই ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন সোহাগ ও তাঁর সহযোগীরা। খবর পেয়ে স্কুলছাত্রীর বাবা কমলনগর থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রেমিক সোহাগ হোসেন, তাঁর সহযোগী কামরুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

চারটি ঘটনাই শুরু হয়েছিল কথিত ‘প্রেম’ থেকে। অথচ এর চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ভয়াবহ। প্রথমে মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
বন্ধুত্ব, এরপর প্রেম, অতঃপর বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ। সব চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হলো- প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রেমিকা তরুণীকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া। 

সবগুলি ঘটনার শেষ পর্যায়ে আইনের আশ্রয় নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। হয় তো বিচার পাবেন অথবা পাবেন না। কিন্তু একজন তরুণীর যে ক্ষতি হয়ে গেল তা পূরণ হবে কী? এ প্রশ্ন সচেতন ব্যক্তিদের থাকবেই। তাই প্রেম পবিত্র হলেও এর আশ্রয় যে লম্পটরা নিচ্ছে, তা থেকেও সতর্ক থাকতেই হবে। সব হারিয়ে লম্পটদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগেই, সচেতন হতে হবে- এ কথার বিকল্প আছে কী? 

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!