• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-আ.লীগ জোটে সংলাপ সম্ভাবনা 


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৮, ২০১৮, ০৭:১৩ পিএম
বিএনপি-আ.লীগ জোটে সংলাপ সম্ভাবনা 

ঢাকা: দেশের প্রধানত দ্বিদলীয় রাজনীতিতে সংলাপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান ভোটপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ এর প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে যখন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ না হলেও ফোনে কথাবার্তা হতেই পারে। যদিও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে সৌজন্যমূলক যোগাযোগ থাকলে অনেক সমস্যাই সমাধান করা যায় বলেও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। 

শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও পরিসংখ্যান রোডে মেট্রোরেলের কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিতে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (সম্পর্ক) জন্য বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা হতে পারে। তবে এ মুহূর্তে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বাকি আর মাত্র পৌনে ৩ মাস। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংলাপের কোনো প্রয়োজন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি এও বলেন, সব কিছুই কি আনুষ্ঠানিক হতে হবে? চোখে দেখাদেখি না হোক। টেলিফোনে তো অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হতে পারে। এতে নিজেদের দূরত্ব কমে যায়। টেলিফোনে কথা বললে সমস্যা কোথায়? এ প্রসঙ্গে তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী তাকে ফোন করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকী তাকে ফোন করে বলেন, কথা বলতে চান। তাকে আমি বলেছি আসেন। অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হতে পারে। আর কিছু না হোক, চোখ দেখাদেখি না হোক টেলিফোনে তো সংলাপ করা যায়। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ায় ‘মানসিক দূরত্ব’ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরে শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থাকার ওপর জোর দেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমাদের অনেক গ্যাপ, মনের মধ্যে অনেক দূরত্ব হয়ে যায়, সবই কি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমিত থাকবে? আমরা কি কথাবার্তা বলব না। টেলিফোনে কথা বলতে অসুবিধা কী? আমি বলেছি, বিএনপি মহাসচিব আমাকে কখনও ফোন করেননি। আমি বলিনি যে আমি সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। এর ভুল ব্যাখ্যা দেবেন না প্লিজ।’

ওবায়দুল কাদেরের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্ষমতাসীন দলের এমন মনোভাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আমরা যে কোনো সময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরপরই শুক্রবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা বহুবার আলোচনার জন্য বলেছি এবং আহ্বান করেছি। আজকে আপনাদের মাধ্যমে আবারও আহ্বান করছি। আসেন আমরা কথা বলি। কোথায় বসবেন? কী করবেন বলেন। আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি।’ আলোচনার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে ফোন করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ ফোন করলে আমরাও ফোন করব। 

এছাড়া শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খানও বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব যখন বলেছেন- বিএনপি চাইলে আলোচনা করতে রাজি; ভালো, আলহামদুলিল্লাহ, আমরা তো বহুবার বলেছি। আমরা বলেছি, জনগণের কিছু দাবি-দাওয়া আছে আমরা তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আওয়ামী লীগ যদি আলোচনা করতে আগ্রহী হয় তাহলে আমি মনে করি এটা একটা ভালো লক্ষণ। তবে যিনি একথা বলেছেন তিনি কতক্ষণ একথার ওপর স্থির থাকতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ রয়েছে। 

এদিকে শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য এবং বিএনপির অবস্থানকে দেশের বর্তমান রাজনীতিতে অনেকটাই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, শুরুতেই এক টেবিলে বসা না হলেও অন্য যে কোনো মাধ্যমে আলোচনা শুরু হোক। এ ধরনের আলোচনার পালে হাওয়া লাগলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দু’দলের মধ্যে বরফ গলবে।

তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে দু’দলকে আলোচনায় বসতে নানা মহল থেকে প্রস্তাব দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। এক টেবিলে না বসায় তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। আগামী একাদশ নির্বাচন সন্নিকটে। নির্বাচন নিয়ে দু’দলের মধ্যে এখনও সমঝোতা হয়নি। ভোট ইস্যুতে দু’দলই বিপরীতমুখী অবস্থানে। এ পরিস্থিতিতে সবার মধ্যেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বড় দু’দলের মধ্যে চলমান বিরোধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের বৈরিতার কারণে দেশ আজ সংকটে। এ সংকট থেকে উত্তরণে দু’দলের মধ্যে সংলাপের বিকল্প নেই। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। না হলে দেশ আরও গভীর সংকটে পড়বে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টেলিফোনে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে আসা সম্ভব নয়। এজন্য এক টেবিলে বসতে হবে। তবে ফোনালাপের মধ্য দিয়ে দু’দলের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করি। যদি ফোনালাপও হয় সেটাও রাজনীতির জন্য ইতিবাচক, যা পরে এক টেবিলে বসতে সহায়তা করবে।

আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে কিনা- এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মধ্যে। ভোটারদের এমন শঙ্কায় দু’দলের মধ্যে সংলাপের আলোচনা তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা সবার।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!