এলাকার উঠতি সুন্দরী মেয়েরাই তার প্রধান টার্গেট

  • কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০৪:৫৫ পিএম
ছবি : মিজান

কেরানীগঞ্জ : এলাকার উঠতি সুন্দরী মেয়েরাই ছিলো তার টার্গেট! পরিচয়ের পর প্রেমের প্রস্তাব, প্রেমের ফাঁদে ফেলতে ফোনালাপ, এরপর একসঙ্গে ঘোরাঘুরি, নির্জনে দেখা, শেষে মিষ্টি কথার মায়ায় মেয়েদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি তোলা।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে কথা ছলে খোলামেলা শরীরের স্কিনশর্ট নিয়ে সেই ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল করে মেয়েদের মতের বিরুদ্ধে সম্পর্ক করাই ছিল তার কাজ।

অন্তরঙ্গ ছবির কারণে বিয়ের পরও স্বামীর সংসার আর লোকলজ্জা ভয়ে মেয়েরা তার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতো। এভাবেই চলছিল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের নতুন বাক্তারচর গ্রামের সাত্তার মিয়ার ছেলে মিজানের জীবন।

তার ব্লাকমেইলের শিকার প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে অন্যের স্ত্রীও। তবে এতোকিছুর পরও মিজান ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। মিজান আলোচনায় আসে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অন্তরা (২৩) নামে এক তরুণীর আত্মহত্যার পর। ওই তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, গত ১৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মিজানের ব্লাকমেইলের ভয়ে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অন্তরা।

জানা যায়, মা-বাবা আর একমাত্র ভাইকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল অন্তরার। নিজ বাড়ি, মামা বাড়ি আর স্কুল-কলেজই যেন ছিল তার পৃথিবী। তবে এই ছোট্ট জগতে হঠাৎ আগমন মিজানের। নানা স্বপ্ন আর আশায় কয়েকদিনেই তাদের সম্পর্ক ডানা বাঁধতে শুরু করে। গোপনে হলেও ভালই চলছিলো তাদের প্রেম। ধীরে ধীরে পরিবারসহ হয়ে এলাকাবাসীও জেনে যায় তাদের প্রেমকাহিনী। 

তবে প্রেমে বাধ সাধে বিয়ে! পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু হলে মিজানকে জানানো হয় সে বিয়ে করবে কিনা অন্তরাকে? এতে মিজান অস্বীকৃতি জানায়, পরে বাধ্য হয়ে গত ৮ জানুয়ারি মেয়েকে বিয়ে দেন নারায়নগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে। তবে বিয়ে টেকেনি এ সপ্তাহ! মিজানের ফোন, ছবিসহ নানা ষড়যন্ত্রে অন্তরাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন অন্তরার স্বামী।  

বাড়ি এসে সেই আগের মতো মিজানেই মজে অন্তরা। বের হতে পারেননি তার জাল থেকে। তবে আবারও আন্তরার অন্তর ভাঙে মিজান। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবারও করলেন না বিয়ে। তাই আট মাস পর মেয়েকে পুনরায় বিয়ে দেন একই ইউনিয়নের যুবক জুয়েলের সঙ্গে। এখানে ভালোই চলছিল তাদের সংসার, অন্তরার অন্তর জুড়ে যেনো শুধুই জুয়েল। তবে এবারও বাধ সাধলো সেই মিজান। 

বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে স্বামী জুয়েলকে নানা বার্তা পাঠিয়ে বিষিয়ে তুলেছিল তাদের সংসার। পাশাপাশি মিজান অনলাইন প্লাটফর্মে তার সঙ্গে অন্তরার তোলা অন্তরঙ্গ ছবি পোস্ট করতে শুরু করে এবং অন্তরার মতের বিরুদ্ধে মোবাইলে বারবার ফোন দেওয়ারও অভিযোগ তোলে অন্তরার পরিবার।

অন্তরার মামা খোকা গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৮ অক্টোবর আমার ভাগ্নির কাবিন সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে মিজানের ফোন না ধরায় অন্তরার সঙ্গে মিজামের যেসব ডকুমেন্ট আছে তা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায় বাড়ি এসে। মৃত্যুর দিন (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে মিজান ও তার সহযোগিরা বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে বার বার যাতায়াত করতে দেখা যায়।

সিসিটিভি ফুটেজেও দেখে যায়, বারবার ফোন আসছিল অন্তরার মোবাইলে। অন্তরা বারবার ফোন কেটে দিচ্ছিলো। এক পর্যায় অন্তরা ফোনে কথা বলে অন্য রুমে গিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। দরজা খোলা রেখেই ফাঁস দেয় অন্তরা, কেউ হয়তো বাঁচাবে বলে, কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ ঘরে আসেনি।

অন্তরার মা বাদী মোসা. গোলেনুর বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়ে অন্তরাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করাসহ এলাকায় নানাধরনের কুৎসা রটিয়েছিল মিজান ও তার সহযোগী হৃদয়। গত ৮ অক্টোবর স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। 

বিষয়টি মিজান জানতে পেরে আমার মেয়ে যাতে সংসার না হয় সেজন্য সে আগের মতো এলাকায় বদনাম রটাতে থাকে এবং আমার মেয়ে ও তার স্বামীর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। মিজান বিভিন্নভাবে আমার মেয়ের জামাইয়ের কাছে আমার মেয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম দেয়।

মৃত্যুর দিন (বৃহস্পতিবার) বেলা অনুমানিক বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আমার মেয়ে বিবাদীকে আহেতুক মিথ্যা কুৎসা রটনা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিবাদী আমার মেয়েকে তার স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করতে দিবে না বলে হুমকি দেন। আমার মেয়ে যাতে এলাকায় মুখ দেখাতে না পারে এজন্য যা করা দরকার তাই করবে বলেও জানায়।

তাছাড়া মিজান আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা দেয় এবং আত্মহত্যা করার প্ররোচনামূলক কথা বলে বাসা হতে বের হয়ে যায়। পরবর্তীকালে আমার মেয়ে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের বলেন, আসামিকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেছে এবং মেয়ের মোবাইল থেকে যেসব তথ্য ও ছবি পেয়েছি তা আদালতে পাঠানো হবে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা যাচ্ছেনা।

আরও পড়ুন - নামি-দামি উকিল নিয়োগ করেও ছেলে ঘরে ফেরাতে পারেননি শাহরুখ

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি শোনার পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৮ অক্টোবর রাতে পলাশপুর এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি মিজানকে আটক করতে সক্ষম হয়। আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোর্টে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ, মিজান আটক হওয়ার পর ভয়ে তার সহযোগীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। সেজন্য আতঙ্কে রয়েছে তাদের ফাঁদে পড়া অন্য মেয়েরা। কোনোভাবে সেসব ছবি ফাঁস হয়ে গেলে সংসার ভাঙার পাশাপাশি তাদের মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা।  

সোনালীনিউজ/এসএন