গাজীপুর

বকেয়া বেতন না পেয়ে কর্মকর্তা পেটালেন পোশাক শ্রমিকরা

  • কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ১০:০৬ এএম

গাজীপুর : গাজীপুর কালিয়াকৈরে বেতন ও অন্যান বকেয়া টাকা না পেয়ে রাফি মাহমুদ নামে কারখানার এক কর্মকর্তাকে পিটিয়েছেন বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিবৃতি দিয়েছে বিজিএমইএ।

আহত কর্মকর্তা রাফি মাহমুদ কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিনস ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক-কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবস্থিত মাহামুদ জিনস লিমিটেড নামে পোশাক কারখানা ঘটনা ঘটে। ওই পোশাক কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গত ৯ অক্টোবর বিভিন্ন সংকটের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছেন মালিকপক্ষ। পাশাপাশি কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক, বিজিএমইএ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে। ওই বৈঠকে গত ২৮ নভেম্বর শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়।

[238464]

সেই অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সকালে কারখানাটির সামনে অবস্থান করেন শ্রমিকরা। কিন্তু এর মধ্যেই পাওনা পরিশোধ করা হবে না জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা ওই এলাকায় পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে মালিকপক্ষ কারখানাটির সামনে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজন ও শিল্প পুলিশের সদস্যদের ওপর ইটপাটকে নিক্ষেপ করেন। তখন শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে সরে যায়।

পরে শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজনকে কারখানাটির ভেতরে অবরুদ্ধ করেন। তখন কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফি মাহমুদ উত্তেজিত শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে শ্রমিকরা তার ওপর হামলা চালান। শ্রমিকদের পিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হন। তখন শ্রমিকদের একটি অংশ তাকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সেখানে চিকিৎসার পর তিনি বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে বেতনের দাবিতে শুক্রবারও শ্রমিকরা ওই কারখানার সামনে জড়ো হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।

কারখানার মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের প্রধান অহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার স্যার (রাফি মাহমুদ) শ্রমিকদের বলছিলেন— আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকা নেই। আমি আপাতত টাকা দিতে পারছি না। তোমরা আমাকে আরেকটু সময় দাও। কিন্তু শ্রমিকেরা বলছিলেন— টাকা আজকের মধ্যেই দিতে হবে। তখন স্যার বলছিলেন, “টাকা না দিতে পারলে তোমরা কি আমারে মারবা, ঠিক আছে মারলে মারো।” এই রকম কথা বলার পর শ্রমিকরা স্যারকে ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট করেছে।’

আহত রাফি মাহমুদের বাবা কারখানার পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার তাদের টাকাপয়সা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকরা আন্দোলন করলে আমার ছেলেকে ফোনে ডেকে সেখানে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাফি মাহমুদ রাত আটটা পর্যন্ত কারখানার ভেতরে অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, তিনি (রাফি মাহমুদ) কারখানায় এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করেন। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনো অভিযোগ হয়নি।

এমটিআই