১৮ বছরের দ্বন্দ্ব এখনো কাটাতে পারেনি বরিশাল-৩ বিএনপি

  • বরিশাল অফিস | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বরিশাল–৩ (বাবুগঞ্জ–মুলাদী) আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়লেও বিএনপির দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখনো নিরসন হয়নি। প্রায় ১৮ বছর ধরে চলমান এই বিরোধ এবারের নির্বাচনেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৩ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে মুলাদী উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন রয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, পথসভা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের বিপক্ষে দলটিরই ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সে সময় ভোট বিভক্ত হওয়ায় দলীয় প্রার্থী পরাজিত হন। ওই নির্বাচনের পর থেকেই দুই নেতার অনুসারীরা আলাদা বলয়ে অবস্থান করছেন। একই এলাকায় একই দিনে পৃথক কর্মসূচি পালনের ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর বিএনপি বরিশাল–৩ আসনে প্রার্থী হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের নাম ঘোষণা করে। এতে মনোনয়নপ্রত্যাশী বেগম সেলিমা রহমানসহ দলের একটি অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। মনোনয়ন ঘোষণার পর মুলাদী উপজেলায় সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার খানের অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনের মাধ্যমে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। একই সময়ে বাবুগঞ্জ উপজেলায় বেগম সেলিমা রহমানের অনুসারীরা মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৭ বছরে বরিশাল–৩ আসনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, বেকারত্ব, মাদক, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাস এখনো বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী নিশ্চিত করা না গেলে ভোটের ফলাফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বাবুগঞ্জ–মুলাদীকে আধুনিক ও উন্নত জনপদে রূপান্তর করাই তাঁর লক্ষ্য। শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান তিনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ খান বলেন, দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে এবং নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করা হবে।

অন্যদিকে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসরাত হোসেন কচি অভিযোগ করেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে বিতর্কিত কমিটি গঠনের কারণে তৃণমূলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বরিশাল–৩ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে এই আসনে ভোটের লড়াই ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে।

এসএইচ