সংবাদ সম্মেলনে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করলেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা

  • রাজশাহী ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম

রাজশাহী: চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আসামিরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’-এর ব্যানারে জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার আসামি রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানি সুমন, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম মিলু ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমনসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত বুধবার রাতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ডেভেলপার ব্যবসায়ী। তার অভিযোগ, ২ লাখ টাকা চাঁদার জন্য আসামিরা চাপ দিচ্ছিলেন। 

তারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছেন। এছাড়া থানায় নিয়ে চাপ দিয়ে মাত্র ২৭ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক ভবনের ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট যুবদল নেতা সুমনের নামে লিখে দিতে বায়নানামার চুক্তিপত্রে সই দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোড়ামারা এলাকায় ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকারও বেশি। পাওনা ২৭ লাখ টাকায় ওই ফ্ল্যাট নিতে সুমন বায়নানামায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছেন বলে মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা সুমন সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উভয়ের সম্মতিতেই ডিড হয়েছে। ২ লাখ টাকা চাঁদার জন্য অপহরণের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

[253476]

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মোস্তাফিজুর রহমান একজন প্রতারক। তিনি সাবেক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার স্ত্রী রেনীর ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক। মোস্তাফিজুর আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০২৩ সালে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ২৭ লাখ টাকা নেন, কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তিনি ফ্ল্যাট দেননি।’

সুমন বলেন, সেই টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তারা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাই গত ৩০ জুন বোয়ালিয়া থানায় সকল পক্ষের উপস্থিতিতে একটি আপসনামা ডিড স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপ ও সামাজিক চাপের মুখে মোস্তাফিজ নিজেই একটি আপসনামা সম্পাদনে সম্মত হন।

সুমন বলেন, ‘যেহেতু আমারও একটি ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন ছিল, তাই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি আমিনুল ইসলামের ফ্লাটটি তার পক্ষে হয়ে কেনার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তিনি ফ্ল্যাট হস্তান্তরের কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে আমার ও আমার রাজনৈতিক অনেক সহকর্মীদের নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন। এটি সাজানো মামলা।’

তিনি দাবি করেন, ‘মোস্তাফিজ নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মামলাটি তিনি প্রশাসনের “প্রেসক্রিপশন” অনুযায়ী দায়ের করেছেন। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা তাকে ফোন করে এই মামলা দায়ের এর বিষয়ে জানতে চান। এই মামলা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে বলে মোস্তাফিজ জানান এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও প্রেসক্রিপশনে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে নজরুল হুদার কাছে স্বীকার করেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তির প্রতারণা নয়, এটি প্রশাসন-সমর্থিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ষড়যন্ত্র বলে এখন মনে হচ্ছে।’

‘দুর্ভাগ্য জনক হলো, এই সময়েও বিগত পতিত সরকারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা কোনো ব্যক্তি যাচাই-বাছাই ছাড়াই কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য মানহানিকর মামলা করতে পারেন এটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে। তাও প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে তাদের প্রেসক্রিপশনে। এদের ক্ষমতার উৎস কোথায় তা বোঝা জরুরি। আমরা মনে করি, এই ধরনের ঘটনা দলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।’

প্রশাসনের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ অস্বীকার করেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করি না। বাদী যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, সেটিই রেকর্ড করা হয়।’

মামলার আসামিদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। কিছু ক্ষেত্রে মামলার পরই আসামি গ্রেপ্তার করা হয়, যেগুলোর ক্ষেত্রে প্রমাণ হাতেনাতেই থাকে। আর কিছু ক্ষেত্রে তদন্তটা একটু করতে হয়। এই মামলাটা তদন্ত পর্যায়ে আছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এআর