ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্নে বাড়ি ছেড়েছিলেন হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণ। কিন্তু ভূমধ্যসাগরের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ১৬ দিন ধরে নিখোঁজ এসব তরুণের খোঁজ না মেলায় শোকে পাগল হয়ে পড়েছেন তাদের স্বজনরা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন তারা। স্থানীয় দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লা, লিবিয়াপ্রবাসী আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, এ যাত্রার আয়োজন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার মাধ্যমে হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫ তরুণ নৌকাযোগে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন- বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়ার আলফাজ মিয়া রনি, মোজাক্কির আহমেদ, সিয়াম জমাদার, মিজান আহমেদ, শ্রীমঙ্গলকান্দির সাইফুল ইসলাম বাবু ও জুবাইদ মিয়া; আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ইমন, পারভেজ, রফিকুল ইসলাম পবলু, হাবিবুর রহমান, সাব্বির, মাহি ওরফে রাহুল, উজ্জ্বল, পিন্টু, মোক্তাকির ও রবিউলসহ আরও অনেকে। কেবল পশ্চিমভাগ গ্রাম থেকেই নিখোঁজ হয়েছেন ছয় তরুণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। এই সুযোগে তিনি হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক তরুণকে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে নিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠিয়েছেন। কম টাকা দিলে তরুণদের ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায় তুলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে এলাকায় কাজ করেন পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল মুকিত মাস্টার, যিনি টাকা সংগ্রহ করে লিবিয়ায় পাঠাতেন।
খবর নিয়ে দেখা গেছে, নিখোঁজদের বাড়িতে চলছে শোক ও আহাজারি। কারও মা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন, কারও বাবা শূন্য চোখে পথ চেয়ে আছেন প্রিয় সন্তানের ফেরার আশায়। ঋণ, এনজিওর কিস্তি ও গরু-বিক্রির টাকায় ছেলেকে ইউরোপ পাঠানো পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব ও অসহায়।
নিখোঁজ তরুণ সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘হাসান মোল্লার মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠাই তিন মাস আগে। পরে তার কথায় ইতালি পাঠানোর জন্য আরও ১৮ লাখ টাকা দিই। এখনো কোনো খোঁজ নেই।’
একইভাবে নিখোঁজ রবিউলের বাবা বাবলু মিয়া বলেন,‘৩০ সেপ্টেম্বর আমার ছেলেকে নৌকায় পাঠানো হয়। তারপর থেকেই নিখোঁজ।’
নিখোঁজ মোক্তাকির মিয়ার ভাই মহসিন আহমেদ জানান, ‘হাসান মোল্লা বলেছেন, সে বেঁচে আছে; কিন্তু যোগাযোগ করতে পারছি না।’
নিখোঁজদের পরিবারের দাবি, ওইদিন চারটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। এর মধ্যে তিনটি নৌকা পৌঁছালেও একটি-যেটিতে হবিগঞ্জের তরুণরা ছিলেন-সেটিই আর গন্তব্যে পৌঁছায়নি।
অন্যদিকে হাসান মোল্লা ফেসবুকে দাবি করেছেন, তার মাধ্যমে যাওয়া একটি নৌকা ‘ডুবলেও অনেককে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ জেলে আছেন।’ তবে কারা কোথায় আছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছেন বলে জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে সহায়তা দেবে।’
ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হবিগঞ্জের তরুণদের পরিবার এখন একটাই আশা করছে ‘সন্তানদের অন্তত খোঁজটা যেন মেলে।’
এম