টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির পর লালমনিরহাটের আকাশ-বাতাসে বইতে শুরু করেছে হেমন্তের শীতল হাওয়া। ভোর হলেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে জেলার গ্রামীণ জনপদ। মাঠে সোনালি ধানের ঝিলিক, উঠোনে ছড়িয়ে থাকা শিউলী-বেলীর সুবাস-সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে।
চলতি বছর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পরই উত্তরাঞ্চলে ঋতুর পরিবর্তনের ছোঁয়া স্পষ্ট হয়েছে। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি এসে লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে অনুভূত হচ্ছে হেমন্তের পরশ। ভোরের আলো ফোটার আগেই কুয়াশায় মোড়ানো পথঘাটে নেমে আসে এক ধোঁয়াটে আবেশ। গ্রামের বিলে শাপলার হাসি, ধানের ক্ষেতে সোনালি আভা, আর দূরের পাখির ডাকে ভোরের নীরবতা ভাঙে-এ যেন শীত আগমনের এক নীরব উৎসব।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৩ শতাংশ।
শীতের আভাস পেয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে নানান প্রস্তুতি। ঘরে ঘরে উঠে আসছে পাতলা কাঁথা-চাদর। দোকানগুলোতে বেড়েছে কম্বল বিক্রির হিরিক। দিনের বেলায় সূর্যের রোদের উষ্ণতা থাকলেও রাতে ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে ঋতু বদলের বার্তা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা আরিফ ইসলাম জানান, “ভোরে জানালার ওপারে দেখি পুরো গ্রাম কুয়াশার চাদরে ঢাকা। কেউ নামাজ শেষে হাঁটছেন, কেউ চায়ের দোকানে বসে গরম চা হাতে গল্প করছেন।”
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, “গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস মৌসুম পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি মাসেই শীত আরও বাড়বে।”
শীতের আগমনী বার্তায় সরগরম হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের হাট-বাজার। মাঠে মাঠে শীতকালীন শাকসবজির চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক, করলা, শসা, লাউ, সিম, টমেটো ও বেগুনসহ বিভিন্ন দেশি সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কৃষকরা জানান, আগাম সবজির ফলন ভালো হওয়ায় পাইকাররা সরাসরি মাঠ থেকে সবজি কিনছেন। এতে চাষিরাও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ধীরে ধীরে আবাদ আরও কয়েক গুণ বাড়বে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এসএইচ