বিএনপির প্রার্থীহীন যে আসনে ঘুমিয়েও জয়ের স্বপ্ন দেখছে জামায়াত

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ–বিজয়নগরের একাংশ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, গুঞ্জন আর হিসাব–নিকাশে জমে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।

এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংরক্ষিত এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা মনোনয়নপ্রত্যাশী। নিয়মিত সভা-সমাবেশ করা, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া-সব মিলিয়ে মাঠে তার সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। রুমিনের সমর্থকদের প্রত্যাশা, শেষ পর্যন্ত দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।

তবে এ আসনটি বিএনপির দীর্ঘদিনের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এবার শরিকদের দেওয়া হতে পারে-এমন আলোচনা জোরালো। মনোনয়ন না পেলে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র হতে পারেন-এমন কথাও মাঠে ঘোরাফেরা করছে। তবে সব হিসাব-নিকাশে জামায়াতে ইসলামীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখছেন সবাই।

জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও জেলা আমির মাওলানা মোবারক হোসাইন আকন্দ ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। জুনে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই দুটি উপজেলায় টানা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। তাদের দলীয় সূত্র বলছে, সরাইলে ৩ জন শহীদ জুলাই যোদ্ধার পরিবারকে ৬ লাখ টাকা সহযোগিতা, দুই উপজেলায় ৫টি মেডিকেল ক্যাম্প এবং হুইল চেয়ার বিতরণ-এসব কর্মকাণ্ডে তিনি এলাকার মানুষের কাছে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৭। সরাইলে ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৬, আশুগঞ্জে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৪ এবং বিজয়নগরের যুক্ত ২ ইউনিয়নে ৫৬ হাজার ৯২৭ ভোটার। স্থানীয়দের মতে, বিএনপি নিজেদের প্রার্থী না দিলে এ এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী মোবারক হোসাইন সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবেন।

স্থানীয়রা বলছেন, রুমিন ফারহানা প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুই উপজেলার গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, ধানের শীষ এখানে অপরাজেয় প্রতীক। দলীয় প্রার্থী বাদ দিয়ে শরিক দলের কাউকে দিলে মাঠেই বিএনপি নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়বেন।

আড়াইসিধার বাসিন্দা হাফিজুল মিয়া মনে করেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে উপজেলাজুড়ে জামায়াত ছাড়া আর কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। ফলে ভোটে তাদেরই সুবিধা হবে। সরাইলেও গত কয়েক মাস ধরে প্রতিটি ওয়ার্ড, গ্রাম ও মহল্লায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোটের জন্য কাজ করছেন।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী ও বিএনপির সমর্থক আব্দুর রহমান শাহ কালু মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে ধানের শীষ ছাড়া অন্য প্রার্থী মানেই নিশ্চিত পতন। পরগাছা নির্ভর রাজনীতি মেনে নেওয়া হবে না।

স্থানীয় সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ীরাও একই মত পোষণ করেন-বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাদ দিলে তা সরাসরি জামায়াতের সুযোগ তৈরি করবে। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মতে, রুমিন ফারহানাই এ আসনে বিএনপির ভোট উদ্ধার করতে সক্ষম।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বলেন, দলীয় প্রার্থী ছাড়া উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না। ধানের শীষই হতে হবে প্রতীক। অন্যথায় এই আসনের ভোট অগোছালো হয়ে যাবে।

অন্যদিকে সরাইল উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জানান, তারা নির্বাচিত হওয়ার আগেই মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এতে ভোটারদের আস্থা বাড়ছে।

জামায়াতের প্রার্থী মোবারক হোসাইন বলেন, নির্বাচনি এলাকার ৭০ ভাগ গ্রামে ইতোমধ্যে গণসংযোগ শেষ হয়েছে। সাধারণ মানুষের সাড়া তাকে আশাবাদী করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে তাই সমীকরণ পরিষ্কার-বিএনপির প্রার্থী ছাড়া ভোটযুদ্ধের মাঠ ঝুঁকে যাবে জামায়াতের দিকে, আর রুমিন ফারহানা মনোনয়ন পেলে দুপক্ষের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

এসএইচ