ঢাকা: বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মূলধন ফেরত দিতে না পারায় বন্ডটির মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি।
ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) নেতৃত্বাধীন ২১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সুপারিশটি করা হয়েছে।
কমিটি জানিয়েছে, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানিয়েছে যে গ্রুপের বর্তমান আর্থিক অবস্থার কারণে ম্যাচুরিটিতে সব টাকা পরিশোধ সম্ভব নয়। ফলে ৩,০০০ কোটি টাকার এই সুকুকের মেয়াদ ছয় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সুকুক বন্ড ইস্যুর শর্ত অনুযায়ী পাঁচ বছরে পর্যায়ক্রমে বন্ডটির ২০ শতাংশ করে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে রূপান্তর হয়েছে মাত্র ৬.৩৬ শতাংশ বা ১৯০ কোটি টাকার ইউনিট। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, অর্ধ-বার্ষিক ৯ শতাংশ মুনাফা বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হওয়ায় রূপান্তরের আগ্রহ কমে গেছে।
অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে বেক্সিমকোর শেয়ারের দাম ১১০.১০ টাকায় স্থির থাকায় কনভার্সন বাস্তবসম্মত ছিল না। বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটে সুকুক ৫৮.৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে, ফলে রূপান্তর বিনিয়োগকারীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
বেক্সিমকোর এক কর্মকর্তা জানান, “গ্রুপের বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়াদপূর্তিতে মূলধন দেওয়া সম্ভব নয়। মেয়াদ বাড়ানো হলে তা সম্ভব হবে।”
সুকুকের অর্থায়নে তিনটি প্রকল্প—তিস্তা সোলার পার্ক, করতোয়া সোলার পার্ক এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইল সম্প্রসারণ—হাতে নেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে কেবল তিস্তা প্রকল্প থেকেই আয় হচ্ছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিস্তা সোলার পার্ক ১,৬৯৩.৩১ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে ১,০৪৪ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ২৪৮.৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে পরিচালন কাজে। সিঙ্কিং ফান্ডসহ বর্তমানে মোট স্থিতি রয়েছে ৪০১ কোটি টাকা। কিন্তু এই অর্থ এবং আগামী এক বছরের সম্ভাব্য আয় দিয়েও মূলধন ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে এসপিভি।
অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ঘটনাবহুল পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত করতোয়া সোলার পার্ক এখনো বন্ধ। এটি পুনরায় চালু করতে ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। টেক্সটাইল ইউনিটও এলসি সংকটে আংশিক বন্ধ আছে। ফলে সুকুক পরিশোধের একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তার আয়।
ওয়ার্কিং কমিটি জানিয়েছে, করতোয়া প্রকল্পে ১৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা গেলে মেয়াদ ছয় বছর থেকে পাঁচ বছরে নামানো যেতে পারে। এ ছাড়া সুকুকের ভিত্তিহার ৯ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিটি আরও সুপারিশ করেছে—
তিস্তা প্রকল্পের ৬৫০ একর জমি, করতোয়ার ১৩০ একর জমি এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইলের ছয়তলা ভবন এসপিভির আওতায় আনা হোক এবং চূড়ান্ত পেমেন্টের সময় ব্যবহারের জন্য সিঙ্কিং ফান্ডের আকার বাড়ানো হোক। বর্তমানে প্রকল্পের জমি বন্ধক না থাকায় লিজ চুক্তি সংশোধনের সুপারিশও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে বিএসইসির কাছে পাঠাবে। এরপর কমিশন মেয়াদ বাড়ানো বা টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে। বিএসইসি জানিয়েছে, এখনো বেক্সিমকো সুকুকের মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো আবেদন তাদের কাছে আসেনি।
বিনিয়োগকারীদের অবস্থান: ১২.০৬ শতাংশ ইউনিটধারী আইএফআইসি সিকিউরিটিজ জানিয়েছে, মেয়াদ বাড়াতে তাদের আপত্তি নেই; তবে মুনাফা হার ২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তারা। আইএফআইসি ব্যাংকের মুখপাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় মুনাফার হার বাড়াতে হবে।”
এক নজরে বেক্সিমকো সুকুক (৩,০০০ কোটি টাকা)
প্রথম বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক অ্যাসেট-ব্যাকড কর্পোরেট সুকুক; প্রাইভেট প্লেসমেন্টে সংগ্রহ: ২,৪৩৯ কোটি টাকা; আইপিও থেকে: ৫৫৮ কোটি টাকা
তিস্তা প্রকল্প বরাদ্দ: ১,৮৮৬.৮৩ কোটি → ব্যয়: ২,১৫৫ কোটি টাকা; করতোয়া বরাদ্দ: ৩০৮.৩১ কোটি → ব্যয়: ৩৯ কোটি টাকা; টেক্সটাইল বরাদ্দ: ৮০৫ কোটি → ব্যয়: ৮০৬ কোটি টাকা
এএইচ/পিএস