দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের একটি কোম্পানির সম্পদের তুলনায় দায় আট গুণেরও বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির দায় পরিশোধ সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে গুরুতর অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছে নিরীক্ষক।
কোম্পানিটির নাম গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের মোট দায় দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ প্রায় ৯১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, আন্তঃকোম্পানি দায় ১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং সরবরাহকারী ও অন্যান্য পাওনাদারের কাছে পরিশোধযোগ্য বকেয়া প্রায় ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এর বিপরীতে কোম্পানিটির চলতি সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ১ টাকার সম্পদের বিপরীতে দায় রয়েছে ৮ টাকা ১৪ পয়সা। এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নিরীক্ষক জানিয়েছে, কোম্পানিটির চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। তবে বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলেও একই সময়ে বিক্রি ও বিতরণ ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। বিক্রি কমার পরও বিতরণ ব্যয় বাড়ার যৌক্তিকতা ও অনুমোদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানিটি নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করেই সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ রাখে এবং পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। যদিও চলতি বছরে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে, তবুও ৩০ জুন ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এদিকে কোম্পানি আইন অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের মাধ্যমে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস এখনো ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৫ হিসাব বছরের এজিএম আয়োজন করেনি। পরিবর্তে পর্ষদ সভার মাধ্যমে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা করপোরেট সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের আর্থিক অবস্থার এই অবনতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এসএইচ