বিজয়ের সাজে সজ্জিত কবি নজরুল সরকারি কলেজ 

  • কবি নজরুল কলেজ সংবাদদাতা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৮:১১ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

বছর ঘুরে আবার এসেছে ১৬ ডিসেম্বর। রাত পোহালেই মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি বাঙালি জাতির গৌরব, আত্মত্যাগ আর বিজয়ের স্মারক। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সরকারি–বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নগরীর অলিগলি লাল-সবুজের আলোয় ঝলমল করে ওঠে।

সারাদেশের মতো ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজও বিজয়ের সাজে সেজেছে। লাল দালানের এই প্রতিষ্ঠানটি লাল-সবুজের বর্ণিল আলোকসজ্জায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। তবে এই আলোর ভিড়েও আড়ালে রয়ে গেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কলেজের একমাত্র শিক্ষার্থী শহীদ শামসুল আলমের স্মৃতি।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও প্রায় ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয় এবং বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থায়ী স্বীকৃতি পায়।

এই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের একমাত্র শিক্ষার্থী শহীদ শামসুল আলম। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও কলেজ ক্যাম্পাসে তার কোনো দৃশ্যমান স্মৃতিচিহ্ন নেই। কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি তার নামে নামকরণ করা হলেও সেটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানেও শহীদ শামসুল আলমের স্মরণে কোনো চিহ্ন নেই।

কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই জানেন না শহীদ শামসুল আলমের ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যারা জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, সময়ের ব্যবধানে তাদের স্মৃতি যেন মুছে যেতে বসেছে। তারা দ্রুত শহীদ শামসুল আলমের নামে কলেজে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মরণ কর্নার স্থাপনের দাবি জানান, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে এই স্বাধীনতা কার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত।

বিজয় দিবস উপলক্ষে কলেজের প্রশাসনিক ভবন, শহীদ ইকরাম হোসেন কাওছার ভবন এবং শহীদ মো. জিহাদ হোসেন ভবন লাল–সবুজের ঝিকিমিকি মরিচবাতির আলোয় সজ্জিত করা হয়েছে। আলোকসজ্জিত ভবনগুলো যেন লাল–সবুজের এক জীবন্ত পতাকায় রূপ নিয়েছে।

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান মারুফ বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের গৌরব ও দায়বদ্ধতার দিন। মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবলেই মনে পড়ে আমাদের ক্যাম্পাসের একমাত্র শহীদ শিক্ষার্থী শামসুল আলমের কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এত বছরেও তার নামে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা নামফলক নেই। যে প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানে তার স্মৃতি অনুপস্থিত থাকা লজ্জার।

ইংরেজি বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল আলম বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কলেজ ভবনগুলো লাল–সবুজের আলোয় সজ্জিত হয়েছে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বিজয়ের রঙ, যা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সন্তানদের কথা গভীরভাবে মনে করিয়ে দেয়।

লাল-সবুজের আলোয় পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ ও লক্ষ্মীবাজার এলাকা বিজয়ের আনন্দে দীপ্ত হয়ে উঠলেও শহীদ শামসুল আলমের স্মৃতির অনুপস্থিতি এই উৎসবের মাঝেই এক ধরনের নীরব প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এসএইচ