ঢাকা : ‘বাইরে সুন্দর, ভেতরে কিছুই নেই’ এই বিশেষ উপমার সংক্ষিপ্ত রূপ মাকাল ফল। বাংলা বাগধারায় মাকাল ফল একটি বিশেষ প্রবাদ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। যে মানুষগুলো দেখতে সুন্দর কিন্তু তাদেরকে দিয়ে কোনো কাজের কাজ হয় না, তাদেরকেই মাকাল ফলের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে।
মাকাল হচ্ছে Cucurbitaceae পরিবারের Trichosanthes গণের একটি লতানো উদ্ভিদ। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল মহাকাল। কালে কালে বিকৃত হয়ে একসময় মাকাল নামে পরিচিতি পায়। মাকাল ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus colocynthis।
মাকাল ফল দেখতে গোলাকৃতির। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ, কিছুদিন পর হলুদ এবং ফলটি পাকার পরে লাল রং ধারণ করে। মাকাল দেখতে আপেলের মতো। তবে আপেলের চেয়েও সুন্দর। পাকা মাকাল ফলের সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু এই ফলের ভেতরটা দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত। বারোমাসি এই ফল খাওয়ার অনুপযোগী।
পৃথিবীতে এই পরিবারের ৪২টি প্রজাতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ১২টি প্রজাতি। এ গাছের জন্মস্থান তুরস্ক। তুরস্ক থেকে এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকা মহাদেশে গাছটির বিস্তার ঘটে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকায় নিসর্গ নীরব ইকো-কটেজের আশপাশে বিপুল মাকাল গাছের সমাহার রয়েছে।
এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। মাকাল ফলের গাছ জঙ্গল বা বাড়ির বড় বড় গাছকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠে। এর পাতায় থাকে অনেক খাঁজ। সারা বছর ফুল-ফল হয়। পানি পেলে সারা বছর চারা গজায়।
বাংলা বাগধারায় মাকাল ফল বিশেষ উপমা হিসেবে ব্যবহার হলেও এই ফলটি কিন্তু একেবারে অপ্রয়োজনীয় নয়। মাকাল ফল ও গাছের রয়েছে ঔষধি গুণ।
এটি একটি পরিবেশবান্ধব গাছ। মাকালগাছের শিকড় কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কফ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে, নাক ও কানের ক্ষত উপশমে মাকালগাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জন্ডিস, দেহে পানি জমা, স্তনের প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা, বাত ব্যথা, পেট ফোলা ও শিশুদের অ্যাজমা নিরাময়ে মাকালগাছের ফল, মূল, কাণ্ড বিশেষ ভূমিকা রাখে।
মাকাল ফলের বীজের তেল সাপের কামড়, বিছার কামড়, পেটের সমস্যা (আমাশয়, ডায়রিয়া), মৃগীরোগ ও সাবান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া মাকাল ফলের বীজের তেল চুলের বৃদ্ধি ও চুল কালো করতে কার্যকর। তাছাড়া পাখিদের অন্যতম প্রিয় খাবার মাকাল ফল। পাকা মাকাল ফলের সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই