সৌদির কোয়ারেন্টাইন নীতির বিষয়ে ভাবছে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২১, ০১:০০ পিএম
ফাইল ফটো

ঢাকা: সৌদি সরকারের নতুন নিষেধাজ্ঞায় সাতদিনের কোয়ারেন্টাইন ছাড়া সেদেশে ঢুকতে পারবে না কেউ। এক্ষেত্রে জনপ্রতি কোয়ারেন্টাইন খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। সৌদি সরকারের এই কঠোর নীতির কারণে বিপাকে পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। এদিকে সৌদি সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে ফিলিপাইন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়ম প্রত্যাহার না করলে সেদেশে কোনো কর্মী পাঠাবে না। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে প্রবাসীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায়। তবে এখনই ফিলিপাইনের মতো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সৌদিগামী যেসব প্রবাসী টাকার অভাবে সৌদি সরকারের কোয়ারেন্টাইন নীতির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় তা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রায় নেতারা সম্প্রতি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সৌদি নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়। এরমধ্যে রয়েছে-সৌদি সরকার যাতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো। তাতে কাজ না হলে সৌদি আরবের হোটেলের পরিবর্তে বাংলাদেশে হাজী ক্যাম্পে সৌদিগামী কর্মীদের কোয়ারেন্টাইন করা যায় কিনা তা নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে তাদের কোয়ারেন্টাইন খরচের অর্ধেক সরকারি ভর্তুকি দেওয়া। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন বাবদ প্রয়োজনীয় খরচ নিয়োগকারী কোম্পানিকে বহনে বাধ্য করা। অথবা ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানানো। এদিকে ফিলিপাইনের শ্রম ও কর্মসংস্থান গত বৃহস্পতিবার এক নোটিশে জানিয়েছে, সৌদি সরকারের নতুন নিয়ম প্রত্যাহার না করলে সেদেশে সব ধরনের কর্মী পাঠানো অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। কারণ, সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণের চুক্তিতে নিয়োগকারী কোম্পানি কর্মীর স্বাস্থ্য ও করোনায় সুরক্ষা সংক্রান্ত ইনস্যুরেন্স ব্যয় বহন করবে। কিন্তু সৌদি সরকার কোয়ারান্টাইন ব্যয় কর্মীর ঘাড়ে ফেলার বিষয়টি সুরাহা আগে হতে হবে। এ বিষয়ে সৌদি সরকারের পরিষ্কার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত ফিলিপাইন থেকে সৌদি আরবে সব ধরনের কর্মী পাঠানো বন্ধ থাকবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, সৌদি আরবের নতুন নিয়মের কারণে বাংলাদেশি কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাড়তি ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে পথে বসেছে। এই নিয়ম বাতিল অথবা কোয়ারান্টাইন খরচ নিয়োগদাতাকে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর পরামর্শ দেন তিনি। তাতে কাজ না হলে ফিলিপাইনের মতো কর্মী পাঠানো আপাতত বন্ধ করে দেওয়ার অবস্থানে যাওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা নেই বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন করে নিয়ম করে যদি কেউ করোনাভাইরাস ছড়ায়, তাকে ৫ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি সেই ব্যক্তি প্রবাসী হয় তবে তাকে শাস্তি দেওয়ার পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে। আর ওই ব্যক্তি কোনো দিন সৌদি আরবে আসতে পারবে না। এছাড়া কোনো প্রবাসী সৌদি প্রবেশ করলে প্রথমে তাকে ৭ দিন নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। যার খরচ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সৌদিতে প্রবেশের আগে হোটেল বুকিং আর ইনস্যুরেন্স ছাড়া কিছুতেই সৌদিগামী ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস পাওয়া যাবে না। গত ১০ মে সৌদি সরকারের এ বিধিনিষেধ সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভিন্ন এয়ারলাইনসকে এ তথ্য জানায়। সৌদি সরকারের এ নিয়ম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় বাংলাদেশ বিমানসহ অনেক এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় সৌদিগামী প্রবাসী বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার বিদেশি সৌদি আরবে তাদের কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে পারেনি। এই জটিলতা শিথিল করায় ফের প্রবাসীরা সেদেশে যেতে পারবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সৌদি আরবে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালে হোটেল ভাড়ায় ভর্তুকি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যারা যাচ্ছেন তাদের হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকতে হচ্ছে। কারণ, ওই দেশ নিয়ম করেছে, যারা সেখানে যাবে তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আমাদের দেশ থেকে যাওয়া প্রবাসীদের কষ্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন তাদের হোটেলে থাকার খরচে যেন সরকার ভর্তুকি দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রবাসী সেখানে যাবেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করে সৌদি আরবে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া হবে। তিনি সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে অনেক দেশ বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এটি খুব দুঃখজনক, বাংলাদেশে মাত্র ১৩ জন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। সম্ভবত একজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত। কিন্তু নেতিবাচক প্রচারণা অনেক বেশি হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচ