• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর জিডি


লালমনিরহাট প্রতিনিধি নভেম্বর ১৬, ২০২০, ০৩:১৬ পিএম
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর জিডি

ছবি: আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি করেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনসুর উদ্দিন।

এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের সরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া এবং রাজস্ব তহবিলের ১৯টি চেক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরো একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

রোববার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় পৃথক দুটি ডায়েরি নথিভুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।

জিডিতে বলা হয়েছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজের অংশ দাবি করেন। এতে বিধি মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করার জন্য উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বলা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে চলে আসেন।

সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ুনকে ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ-সংযোগ খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ-সংযোগ খোলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মনসুর উদ্দিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বেশি কথা বললে ‘পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’ এমন কথা বলেন।

অন্যদিকে, আদিতমারী থানায় আরেকটি ডায়েরি করেছেন উপজেলা পরিষদের মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান। ডায়েরিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১২ নভেম্বর অফিস শেষে বাড়িতে চলে যান তিনি। গত ১৫ নভেম্বর অফিসে এসে ভেতরের পকেট গেট খোলা দেখতে পেয়ে অফিসের চারজন সহকর্মীকে নিয়ে গচ্ছিত কাগজপত্র যাচাই করি। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভার নথি, উপস্থিত হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা এবং উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরো পাঁচজন সহকারীর উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস চেক বইটি ১০০ পাতার দেখতে চেয়ে হাতে নেন। এ অবস্থায় উপজেলা রাজস্ব তহবিলের হিসাব নং-৩৩০০৪৯৬৪ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আদিতমারী শাখার ১৯টি চেক যা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধের নিমিত্তে যৌথ স্বাক্ষরিত ছিল। সেগুলো তিনি তাদের উপস্থিতিতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে চেয়ারম্যান তার নিজের নিকট সংরক্ষণ করেন।

এ বিষয়ে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি জিডি তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে, ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক কায়েস। পরে, জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ইউএনও।

এতে তার বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন চেয়ারম্যান। তবে, আগে-পরের নানা অভিযোগ আনা, ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর গতকাল সাক্ষ্য নিয়েছে, তদন্ত কমিটি। আগামীকাল এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে, তাদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমাকে ফাঁসাতেই নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সে কারণেই জিডি করা হয়েছে।’

চেকগুলোতে তার (চেয়ারম্যান) কোনো স্বাক্ষর ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উপজেলার ১৭ কর্মকর্তার দেয়া অভিযোগের তদন্ত রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। লালমনিরহাট স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মো. রফিকুল ইসলাম সবার সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই তদন্ত কার্যক্রম চলে। কমিটি মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে।
 
সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!