• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকতে সুনশান নীরবতা


কলাপাড়া প্রতিনিধি আগস্ট ২১, ২০২১, ১১:৪৯ এএম
গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকতে সুনশান নীরবতা

কলাপাড়া : দীর্ঘ সৈকতে সুনশান নিরবতা। দুয়েকটি মাছ ধরা ট্রলার রোদ,বৃষ্টির লুকোচুরির আড়মোড়া ভেঙ্গে ছুটছে সাগর দিকে। জেলে পরিবারের ছোট ছোট শিশুরা সৈকতে খেলা করছে নির্বিঘ্নে আর বাবার জন্য অপেক্ষা করছে মাছের ডালা নিয়ে কখন সাগর থেকে ফিরবে মাছ নিয়ে। পূর্ব দিকের সৈকতের ঝাউ গাছের সারি সারি গাছ মাথা তুলে বাতাসের সাথে দোল খেলেও. পশ্চিমের সৈকতে বালুতটে পড়ে আছে শত শত গাছ। কয়েক সপ্তাহ আগেই এই গাছগুলো সৈকতের বালু ক্ষয়ে ভেঙ্গে উপড়ে পড়েছে। যেগুলো ভেসে যাচ্ছে সাগরের জোয়ারে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে জেলে পল্লীতে নিরবতা নেমে আসায় এই সৈকতও শান্ত হয়ে যায়। তখন শুধু দূর থেকে শোনা যায় সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা ঘৈষা গঙ্গামতি সৈকতের এ চিত্র ঠিক এমনই ছবির মতো সাজানো। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই সৈকতেও ছিলো না পর্যটকদের আনাগোনা। বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গঙ্গামতি সৈকতেও পর্যটকদের ভীড় বাড়বে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

লকডাউনের আগে গঙ্গামতির দীর্ঘ সৈকতে সর্বত্রই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে চলতো পর্যটক। বর্ষায় সাগরের উত্তাল ঢেউগুলো সৈকতে আছড়ে পড়ার সাথে সাথে তার সাথে আলীঙ্গনে মক্ত হয়ে পড়তো সমুদ্র স্নানে নামা দর্শনার্থীরা। একটু পরপর সাগরে মাছ ধরা ছোট্র নৌকা ও ট্রলার ছুটোছুটি করতো সমুদ্রের নীল জলে। কিন্তু এখনও ট্রলার চলে সমুদ্রে, কিন্তু নেই পর্যটকদের বিচরণ।

কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী স্টেশনের একটি মাত্র খেয়া নৌকা পেরিয়ে সড়ক পথে গঙ্গামতি সৈকতে পৌঁছতে মাত্র এক ঘন্টা সময় লাগে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে কুয়াকাটার এ বিকল্প সড়ক পথে গঙ্গামতি সৈকত ঘুরে কুয়াকাটায় রাত্রি যাপন পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের এক অন্যমাত্রা যোগ করেছে।

গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এখানে গ্রীস্ম, বর্ষাসহ সকল ঋতুতেই পাখিদের কলরবে মুখরিত থাকে। বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুকাবেলায় সারি সারি সাজানো জেলেদের নৌকার বহর। সকাল থেকে এ নৌকা সাজানো থাকলেও শেষ বিকালে তা সাগরে ভাসে মাছ শিকারের জন্য। এখান থেকেই অবলোকন করা যায় সাগরে সংগ্রামী জেলেদের জীবনযাত্রা। এ সৌন্দর্য দেখতেই পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসে।

গঙ্গামতি এলাকার রফিক মাঝি, ইলিযাশ মোল্লা জানান, সমুদ্রের ভয়াবহ ভাঙ্গন ও সৈকতের অব্যাহত বালুক্ষয়ের কারণে এই গঙ্গামতি সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ঝড়, জলোচ্ছাস ও সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে গঙ্গামতি সৈকতের বালু ক্ষয়ে একে একে উপড়ে পড়ছে সারি সারি গাছ। কিন্তু এই সৈকত রক্ষায় কখনই কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ কারণে সাগরের জোয়ারে বনাঞ্চল ধ্বংসের পাশাপাশি এখনকার বসতঘরও তলিয়ে যায় অতি জোয়ারে। তখন সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি সৈকতের অবস্থান। প্রায় তিন হাজার একরেরও বেশি খাসজমি নিয়ে বিশাল সমুদ্রের বেলাভূমি। বন বিভাগের মাইলের পর মাইল সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য যেন সাজিয়ে রাখা। এ বনাঞ্চলে এক সময় বিরল প্রজাতির পাখিসহ মাঝে মধ্যেই চোখে পড়বে বন্য শুকড়, কাঠ বিড়ালী, শিয়াল। কুয়াকাটা সৈকত থেকে গঙ্গামতি সৈকতের দূরত্ব মাত্র ৭ মিলোমিটার। কিন্তু এই সৈকত বরাবরই রয়ে গেছে অবহেলায়। এ কারনে প্রকৃতি ক্রমশ ধ্বংস হওয়ায় প্রাণী ও জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!