• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, নিষেধাজ্ঞার খবরে হতাশা


ভোলা প্রতিনিধি     সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৭:১১ পিএম
জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, নিষেধাজ্ঞার খবরে হতাশা

ভোলা : দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের সোনালী জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। এতে করে জেলেদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না মিললেও এখন তারা ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে। মাছ ঘাটগুলোতে ফিরেছে কর্ম চাঞ্চল্যতা। এভাবে মাছ ধরা পড়লে বিগত দিনের ধার দেনা পরিশোধ করে লাভবান হতে পারবে বলে আশা করছে জেলে ও আড়তদাররা। তবে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ রক্ষা অভিমানের নিষেধাজ্ঞার কারণে হতাশ মৎসজীবীরা।

সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে জানা গেছে, দেশে ইলিশের চাহিদার প্রায় ৩৩ ভাগ উৎপাদন হয় নদী ও সাগর বেষ্টিত উপকূলীয় জেলা ভোলা থেকে। কিন্তু  ইলিশের ভরা মৌসুম শুরুর পর থেকে গেলো ২ মাস ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দেয়।  এসময় চরম বিপাকে পরেন ভোলার দের লক্ষাধিক জেলে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাকেঁ ইলিশ। মাছ ধরা পড়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে মৎস্য আড়ৎগুলো। কিছুদিন আগেও যেসব মাছঘাট গুলোতে শুনশান নিরবতা ছিলো, এখন সেখানে ক্রেতা ও আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বেড়ে গেছে জেলে আড়ৎদার মহাজনদের ব্যস্থতা। পাশাপাশি জেলে পল্লীতে দেখা দিয়েছে উৎসব আমেজ।  
 
ভোলা সদর উপজেলার নাছির মাঝি এলাকার জেলে সুজন মাঝি ও এছাক মিয়া জানান, গত ১০/১২ দিন ধরে জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলেছে। এ ভাবে তারা মাছ পেলে পিছনের ধার দেনা পরিশোধ করে লাভের মুখ দেখবে।
 
ইলিশা চডারমাথা মাছ ঘাটের মাছের পাইকারি আড়ৎদাররা ইসমাইল বেপারি জানান, তারা প্রচুর মাছ মোকামে পাঠাচ্ছে। সেখানে দামও ভালো পাচ্ছে। এভাবে মাছ ধরা পরলে মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

তবে ইলিশ ধরা পড়লেও স্বস্তি নেই জেলেদের। কারণ ভরা মৌসুমে বেশি মাছ ধরার আশায় ধার দেনা করে মাছ ধরতে নেমেছেন তারা। অথচ আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে সব ধরনের মাছধরার উপর নিষেধজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এতে জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা নেমে এসেছে। তাই জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তনের দাবি তাদের।

সদর উপজেলার তুলাতলী মাছঘাটে জেলে সাজল মাঝি ও হাফেজ পাটোয়ারী জানান, চলতি মৌসুমে গত ৬ মাস নদীতে ইলিশের দেখা মিলেনি। গত দু’সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পরছে। এক মাস আগেও ভোলার নদ-নদী ছিল ইলিশ শূন্য। এখন জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে করে জেলেদের মধ্যে আনন্দ দেখা গেলেও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। মাছ ধরায় অবরোধ পিছিয়ে না দিলে সমিতির কিস্তি শোধ করা কষ্টসাধ্য হবে বলেও জানান তারা।

ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা মো: জামাল হোসাইন জানান, দেরীতে হলেও জেলেদের জালে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে। এতে করে তাদের ধার দেনা পরিশোধ করতে পারবে এবং ভোলা জেলালায় ইলিশের যে লক্ষমাত্র তা অর্জিত হবে।

তিনি আরো জানান, অক্টোবর মাস হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই মাসে পূর্ণিমা আমাবস্যাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ সাগর থেকে নদীতে ডিম ছাড়তে আসে। তাই মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারলে অভিমান শেষে জেলেদের জালে আবারও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলেছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য অফিস কার্যালয় সূত্র জানায়, গেল অর্থবছরে ভোলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯০ মে:টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের মধ্যে ৩৩ ভাগ।  চলতি অর্থবছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯০ মে:টন । মৌসুমের প্রথম ৩ মাসেই ধরা পড়েছে প্রায় ৫২ হাজার মে. টন ইলিশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!