• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নবর্ণের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ায় বাগেরহাটে শিক্ষক পরিবারকে একঘরে


বাগেরহাট প্রতিনিধি: এপ্রিল ৭, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম
নিম্নবর্ণের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ায় বাগেরহাটে শিক্ষক পরিবারকে একঘরে

সংগৃহীত ছবি

বাগেরহাট: ব্রাহ্মণ হয়ে নিম্নবর্ণের এক সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ায় বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক শিক্ষক পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।ওই পরিবারের সদস্যরা সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিবারটি এখন বসতভিটা বিক্রি করে ওই এলাকা ছেড়ে অন্য গ্রামের যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।

পাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল্পনা হালদার বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মৃত কালিদাস মণ্ডলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে আমার স্বামী সভা রঞ্জন গুহ অংশ নিয়ে অতিথি আপ্যায়নে সহযোগিতা করেন।

‘এ ঘটনার জেরে সমাজ ডেকে মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি গুহ আমাদের পরিবারকে একঘরে করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা সমাজ থেকে আমাদের বাদ দিয়ে ৩০ মার্চ বাড়ির পাশে অন্নদা গুহর বাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠান করেন।’

শিক্ষক আল্পনা হালদারের স্বামী সভা রঞ্জন গুহ বলেন, ‘একজন মৃত মানুষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমাদের পরিবারকে সমাজ থেকে একঘরে করা হয়েছে। ঘোষণার পর থেকে আমরা সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। বসতভিটা বিক্রি করে এই এলাকা ছেড়ে আমরা অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’

এ ব্যাপারে মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি গুহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্রাহ্মণ হয়ে সভা রঞ্জন গুহ নিম্নবর্ণের এক সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাড়িতে যাওয়ায় সামাজিকভাবে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সমাজপ্রধান হিসেবে আমি বিষয়টি ঘোষণা দিয়েছি মাত্র।’

মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মৃত কালিদাস মণ্ডলের ভাই রুহিদাস মণ্ডল বলেন, ‘সমাজে যারা প্রধান তারা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পুঁথি-পুস্তকের বাইরে সমাজে কিছু নিয়ম জারি করেছে। সমাজের নিরীহ মানুষের ওপর তারা ওই নিয়ম চাপিয়ে দেয়। যারা ওই নিয়ম মানতে চায় না, সমাজপতিরা তাদের একঘরে ঘোষণা করে। শুধু সভা রঞ্জন একা নয়, আগেও বহু পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেছে ওই সমাজপতিরা।’

পাঙ্গাশিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মৃন্ময় মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাজ সেই পুরোনো ধারণা আঁকড়ে থাকবে সেটা ঠিক না। আমরা বিজ্ঞানের যুগে পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

হিজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবু সাহিন বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তার পরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।’

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!