• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পদ্মা সেতু প্রথম পাড় হলেন যারা


মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জুন ২৬, ২০২২, ১১:০৫ এএম
পদ্মা সেতু প্রথম পাড় হলেন যারা

ছবি : সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জ : দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনের পর দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ প্রকল্প পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে আজ। রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। 

এসময় বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সকাল থেকে উৎসুক জনতা সেতুর উত্তর প্রান্তে ভিড় করেছে। অনেকেই শখের বশে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য এসেছেন। পাঁচটি কাউন্টার এর মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে। 

এদিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল দিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে আশা মোটরসাইকেলচালক জসিম প্রথম টোল প্লাজা পার হন। তার মোটরসাইকেলের নম্বর ঢাকা মেট্রো ল ১৯-৮৩৫৮। প্রথম ট্রাক ঢাকা মেট্রো ট -১৮-৭২২২, প্রথম প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো গ২৮-০৯৮৬প্রথম বাস ঢাকা মেট্রো হ ১৫-৪৬২৪।

এসব চালকের মধ্যে কারা আগে সেতুতে চড়েন পাড় হলে তাদের নিম্নে তুলে ধরা হল:

মোটরসাইকেল: উত্তর প্রান্তে প্রথমেই টোল দিয়ে সেতু পাড়ি দেন মোটরসাইকেলচালক জসিম। তার মোটরসাইকেলের নম্বর ঢাকা মেট্রো ল ১৯-৮৩৫৮। গন্তব্য শরীয়তপুর।

প্রথমবারের মতো সেতুতে চড়ার উচ্ছ্বাস দেখা যায় জসিমের চোখে-মুখে। তিনি বলেন, ‘আমি বাইক নিয়ে প্রথম সবার আগে পদ্মা সেতু পার হব—এই ইচ্ছা নিয়ে রাতেই মাওয়া চলে এসেছিলাম। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আমি খুবই খুশি। সারা জীবন বলতে পারব আমি ইতিহাসের সাক্ষী।’

ট্রাক : সেতুর এ প্রান্তে প্রথম যে ট্রাকটি পৌঁছায়, তার নম্বর ঢাকা মেট্রো ট ১৮-৭২২২। চালক মো. শিপু পণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন বরিশালে। এক প্রান্তের প্রথম ট্রাকের চালক হিসেবে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব আনন্দ লাগতাছে; গর্ব হইতাছে যে আমি সেতুতে প্রথম ট্রাক চালায়া যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ আমাদের এতদিনের কষ্ট দূর করার জন্য।’

অ্যাম্বুলেন্স : যে অ্যাম্বুলেন্সটি টোল দিয়ে সেতুতে ওঠে, তার নম্বর ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-১৩০৯। চালক আশিক বলেন, ‘মনটাই ভালো হয়ে গেছে। ব্রিজে প্রথম রোগী নিয়ে পার হইতাছি। আগে প্রতিবার ঘাট আর ফেরির চিন্তায় থাকতাম। কত রোগী মারা গেল আমার গাড়িতে। এখন আর এসব চিন্তা মাথায় আসব না।’

কাভার্ডভ্যান : ঢাকা মেট্রো ট ১৪-৫৪২৩ নম্বরের কাভার্ডভ্যানটি প্রথম টোল দেয় মাওয়া প্রান্তে। এর চালক ফেরদৌস বলেন, ‘আমি বুঝি নাই যে প্রথমে আমি কাভার্ডভ্যান নিয়া ব্রিজ পার হইতে পারব। আমি মাল নিয়া যাব মাদারীপুর। গত তিন দিন ধইরা ঘাটে বইসা ছিলাম। পরে মালিক বলল ব্রিজ দিয়া পার হইয়া যাইতে। এই জন্য আসলাম। আমার খুব খুশি লাগতাছে; আমার কাভার্ডভ্যান প্রথম ব্রিজে উঠল।’

প্রাইভেটকার : মাওয়া প্রান্তে প্রাইভেটকারের মধ্যে মো. রাজুর গাড়িটিই প্রথম সেতুতে ওঠে। টয়োটা করল্লা ব্র্যান্ডের গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো গ ১৪-৪৭৭১।

রাজু বলেন, ‘আমরা যাচ্ছি মাদারীপুর। আজকেই যাচ্ছি ব্রিজ দেখব বলে। রাতের বেলা এখানে আসছি, যেন সবার আগে আমার গাড়ি ব্রিজে উঠতে পারে। তা-ই হলো। এখন খুব ভালো লাগছে।’

এসইউভি : মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুতে চড়া প্রথম স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল (এসইউভি) ছিল নিশান এক্সট্রেইল মডেলের ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-০৬৮৬ নম্বর গাড়িটি।

সেতুতে নিজের গাড়ির চাকা প্রথম ঘোরানোর পরিকল্পনা নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন শাহিন। বেলুন হাতে গাড়ির ছাদ খুলে আনন্দ করতে করতে সেতু পাড়ি দেয়ার আগে গাড়িটির মালিক বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমার গাড়ি সবার আগে সেতুতে উঠবে। সবার প্রথম হতে পারিনি, কিন্তু জিপ গাড়ির মধ্যে আমারটাই প্রথম, এটাই বা কম কী! আমি খুব খুশি।’

পিকআপভ্যান : সেতুর এক প্রান্তে চড়া প্রথম পিকআপভ্যানের চালক রাশেদুল। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ন ১৮-১৬০৪। পিকআপ ক্যাটাগরিতে গাড়িটি যে সবার আগে, তা বুঝতে পারেননি রাশেদুল। 

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো বুঝিই নাই যে, আমার পিকআপ প্রথম৷ ভাবছিলাম আগে যামু। এই জন্য তাড়াতাড়ি আসছিলাম, কিন্তু এত জ্যাম দেখে বুঝছি আমার আগে যাওয়া আর হইব না। অহন আপনে কইলেন আমার আগে অন্য কোনো পিকআপ যায় নাই। এইডা তো খুব খুশির কতা। বাসায় ফোন কইরা জানামু।’

বাস : মাওয়া প্রান্তে সেতুতে চড়া প্রথম যাত্রীবাহী বাসটি এনা পরিবহনের। এর নম্বর ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৪৬২৪। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসটির চালক মো. বাবুল বলেন, ‘আমি খুবই খুশি আমার বাস প্রথম ব্রিজ দিয়া যাবে। এই আনন্দ আপনারে বুঝাইতে পারব না। আমি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ, কিন্তু বাস চালাই উত্তরবঙ্গ রুটে।পদ্মা সেতু দেখতাম আর ভাবতাম, এই ব্রিজে কি আমার গাড়ি চালানোর সৌভাগ্য হইব? দেখেন আল্লাহ আমার আশা পূরণ করছে। প্রথম বাস আমারটাই উঠল।’

এদিকে সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, সকাল ভোর পাঁচটা ৫০মিনিটে দিকে আমরা যানবাহন পারাপারের জন্য পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিকেই মোটরসাইকেলের চাপ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে বাস-মিনিবাস প্রাইভেটকার এবং তাকে দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু পার হওয়া এবং দেখার জন্যই উৎসুক জনতার সংখ্যাটাই বেশি।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জিয়া বলেন, পদ্মা সেতু সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য রাত থেকেই কিছু গাড়ি সেতু পারের জন্য টোল প্লাজায় অপেক্ষা করছিল। এজন্য কিছুটা যানজট সকালে দেখা দিয়েছিল। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!