• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে পাচার কলেজছাত্রীর দেশে ফেরার আকুতি


লালমনিরহাট প্রতিনিধি আগস্ট ১১, ২০২২, ০৬:১৬ পিএম
ভারতে পাচার কলেজছাত্রীর দেশে ফেরার আকুতি

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলায় ১৯ বছর বয়সী এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে প্রেমিক তিলক ওরফে শুভ (৩০)। পরে ওই কলেজ ছাত্রীকে হাত পা বেঁধে কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে ভারতে পাচার করে শুভ। এই পাচারের সাথে হাতীবান্ধা থানার এক পুলিশ সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এদিকে বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে অপহৃত ওই কলেজ ছাত্রীর বাঁচার আকুতির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরই মধ্যে ভারতের শিলিগুড়ি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি ঘোড়ার মোড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্ত শুভকে আটক করেছে। বর্তমানে তারা শিলিগুড়ি থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অপহৃত ওই কলেজ ছাত্রীর বড়ভাই কামরুজ্জামান লুলু। 

অভিযুক্ত তিলক রায় শুভ (২৩) হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকড়ি গ্রামের ধনঞ্জয় রায়ের ছেলে।

ভাইরাল হওয়া ৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও’তে অপহৃত কলেজছাত্রী নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রতারণার শিকার, আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করে ভারতে পাচার করে প্রেমিক শুভ। এখানে একটি বাসায় আটকে রেখে আমাকে নির্যাতন করছে’। ভিডিওতে সে নিজেকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আকুতি জানায়। পরে ভারতের শিলিগুড়ি এলাকার ঘোড়ার মোড়ে এক বাসায় বন্দী অবস্থায় নিজেকে উদ্ধারের আর্তি জানানো ওই কলেজছাত্রীর ভিডিও মূহুর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। 

ভুক্তভোগীর পারিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে, গত বছরের গত ৫ডিসেম্বর অপহরণের শিকার হয় ওই কলেজ ছাত্রী। অপহরণের পর হাতীবান্ধা থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বড় ভাই কামরুজ্জামান লুলু। ওই মামলায় হাতীবান্ধা উপজেলার গেন্দুকুড়ি এলাকার ধনঞ্জয়ের পুত্র তিলকসহ ৫জনকে আসামী করা হয়। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক সুকুমার রায় ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার না করেই অর্থের বিনিময়ে দুই আসামির নাম বাদ দিয়ে ইতোমধ্যে চার্জশিট আদালতে জমা দেন। ওই কলেজছাত্রীকে ভারতে পাচারের সবকিছু পুলিশের ওই কর্মকর্তা সুকুমার রায় জানেন। পাচারের সাথে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত বলে দাবী করেন কলেজ ছাত্রীর বড় ভাই। 

তবে হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুকুমার রায় দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে টাকা নেয়া ও পাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগটি সাজানো। তিনি শুধু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র।

ভুক্তভোগীর বড়ভাই কামরুজ্জামান লুলু বলেন, ‘‘আমার বোনের সঙ্গে তিলক ওরফে শুভর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোনকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায় শুভ। সেখানে তারা বিয়ে করে। বিয়ের পরে আমার বোন জানতে পারে তিলক ওরফে শুভ হিন্দু। এরপর আর তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। এরপর বোনকে না পেয়ে তাকে উদ্ধারে জন্য গত ৬ জানুয়ারী তিলক, তার বাবা ধনঞ্জয়, তার মামা গোপাল ও দুই বন্ধুসহ ৫ জনের নামে হাতীবান্ধা থানায় এজাহার দায়ের করি। তারপরেও তাদের কোনো খোঁজ-খবর পাননি তারা।’’ 

হঠাৎ ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী কৌশলে তার বড়ভাইয়ের মোবাইল ফোনে নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ পাঠায়। সেই ফুটেজ দেখে তার ভাই কামরুজ্জামান একজনকে সাথে নিয়ে চলতি মাসের ৪ আগস্ট ভারতের শিলিগুড়িতে যায়। সেখানে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঘোড়ার মোড় এলাকার এক বাসা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারসহ তিলককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে তারা শিলিগুড়ি থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন বলেও তিনি জানান।

হাতীবান্ধা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, এঘটনা থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তিনজনের নামে আমরা আদালতে চার্জশিট প্রদান করেছি। তিনি আরও বলেন, ওই কলেজ ছাত্রী একটি ভিডিও আমরা দেখেছি। ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক ওই মেয়ে ও ছেলেকে ভারত থেকে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!