• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

টাকার বিনিময়ে মিলছে ইপিআই টিকা কার্ড


আলমগীর হুসাইন, কাউনিয়া  ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০২:৩০ পিএম
টাকার বিনিময়ে মিলছে ইপিআই টিকা কার্ড

কাউনিয়া: রংপুরের কাউনয়া উপজেলায় গত ছয় থেকে আট মাসে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ নবজাতক শিশুদের টিকাদানের পর মিলছে না টিকা কার্ড। টিকা কার্ড না পাওয়ায় জন্মনিবন্ধনে বিড়ম্বনা পড়েছে অভিভাবকরা। অপরদিকে স্বাস্থ্য সহকারি আব্দুল মবিনের বিরুদ্ধে নবজাতকের অভিভাবকদের টাকা বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য ঠিক সময়ে ঠিক টিকাটি শিশু ও মাকে দিতে পারা। দেশের মানুষকে টিকা দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি কুড়িয়েছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ হিসেবে পুরস্কৃত করে। এরআগে ২০০৯ ও ২০১২ সালে ‘গাভি বেস্ট পারফরম্যান্স’ পুরস্কার লাভ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কাউনিয়ায় নবজাতকদের টিকা দেয়ার পর বিড়ম্বনায় পড়েছে অভিভাবকরা। টিকাদানের পর টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে টিকা কার্ড।

হারাগাছ পৌর এলাকার সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিমি বলেন, তাঁর কন্যা শিশুর বয়স দুই মাস। একই এলাকার ইসলামের বাড়ীতে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইপিআই কেন্দ্রে তাঁর শিশুর তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়। টিকা কার্ড চাইলে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারি আব্দুল মবিন তাকে জানান, টিকা কার্ডের সরবরাহ নেই। কার্ড নিতে একশত টাকা লাগবে। পরে তিনি টাকা দিয়ে টিকা কার্ড সংগ্রহ করেন।

সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ভোলা আসমানী বেগম বলেন, তাঁর শিশুর বয়স চার মাস। একই এলাকার টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। তাই সন্তানের এখনো জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি।

স্বাস্থ্য সহকারি আব্দুল মবিন সোনালীনিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে টিকা কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে না। কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে টিকা কার্ড নবজাতকের অভিভাবকদের সরবরাহ করা হয়। টিকা কার্ড প্রিন্টের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রশিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। সে জন্য মাসে ৪৬৫ টি নতুন টিকা কার্ডের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কাউনিয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত টিকা কার্ড সরবরাহ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে স্বাস্থ্য সহকারিদের ইপিআই টিকা কার্ড সরবররাহ করা হয়।

তিনি বলেন, শিশুদের টিকাদানের পর নবজাতকের অভিভাবকরা টিকা কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এমনকি টিকাদানের পর টাকা বিনিময়ে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্য সহকারির বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। তবে ২০২২ সালে কতজন শিশুকে ইপিআই টিকা দেয়া হয়েছে এই তথ্য জানতে স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় বেশ কয়েকজন নবজাতকের অভিভাবকের সাথে। রাজিব গ্রামের পারভিন আকতার জানায়, তাঁর শিশুর বয়স দুই মাস। রাজিব এলাকায় ইপিআই টিকাদানের পর এখনো কার্ড পাননি তিনি। টিকা কার্ড নাকি টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে জানিয়েছেন ইপিআই কেন্দ্রে দায়িত্বরত।

বিনোদমাঝী গ্রামের ইসমি আরা বলেন, তাঁর শিশুর বয়স আট মাস। ইপিআই টিকাদানের পর তাকে টিকা কার্ড দেওয়া হয় নাই। স্বাস্থ্য সহকারিরা জানিয়েছেন, টিকা কার্ড সরবরাহ নাই তাই সাদা কাগজেই লিখে দেওয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ।

শহীদবাগ বল্লভবিষু গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা রানী বলেন, তাঁর শিশুর চারটি টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাননি এখনো। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকা কার্ড চাওয়া হচ্ছে।

এদিকে নবজাতক শিশুর অভিভাবকদের ভাষ্য, টিকা কার্ড সব শিশুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনের সনদের জন্য কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সোনালীনিউজকে বলেন, যে কোনো শিশুর পরিচয়ের জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়া পযর্ন্ত দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই হলুদ কার্ড। প্রত্যেক শিশুর জন্য জন্মনিবন্ধনের এই কার্ড অপরিহার্য। কিন্তু শিশুরা টিকা পাচ্ছে তবে পাচ্ছে না টিকা কার্ড।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মীর হোসেন সোনালীনিউজকে বলেন, আমাদের এখানে পযাপ্ত টিকা কার্ড আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সহকারিদের তা সরকরাহ করা হচ্ছে। টিকাদানের পরও সব নবজাতক শিশুদের টিকা কার্ড দেয়া হচ্ছে। যদি কোন নবজাতকের অভিভাবক টিকা কার্ড না পেয়ে থাকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এক স্বাস্থ্য সহকারির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নবজাতকের অভিভাবককে ইপিআই টিকা কার্ড দেয়ার আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শামীম আহমেদ সোনালীনিউজকে বলেন, শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের টিকাদানের পর সব শিশুরা বিনামূল্যে টিকা কার্ড পাওয়ার কথা। কাউনিয়া উপজেলায় কেন টিকা কার্ড পাচেছ না বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আর কোন স্বাস্থ্য সহকারি টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করে থাকে তাঁর ছবি সহ নিউজ করেন।

রংপুর জেলা প্রশাসক ডা. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, শিশুদের জন্মনিবন্ধনের টিকা কার্ড অপরিহার্য। কার্ড না পেলে বিড়ম্বনায় পরবে অভিভাবকরা। আমি বিষয়টি দেখছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ এ.বি.এম আবু হানিফ সোনালীনিউজকে বলেন, টিকা কার্ড প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমর্কর্তা দেখভাল করে। ইপিআই কার্যক্রম সফলতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। আর সরকারের এই কার্যক্রম বিঘ্নিত করতে কোন স্বাস্থ্য সহকারি টিকা কার্ড না দেয় এবং টাকার বিনিময়ে টিকা কার্ড সরবরাহ করার যে অভিযোগ উঠেছে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!