চট্টগ্রাম: সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৩ দিন পর দেশের মাটিতে পা রেখেছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাকিব। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবেন দুঃসহ সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারবেন বলে মনে হয় না! দুর্ধর্ষ জলদস্যুরা একে৪৭সহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে সারাক্ষণ। যেন পান থেকে চুন খসার জো নেই।
এর রকম দুঃসহ বন্দিদশায় ঈদুল ফিতরের জামাত পড়ছেন নাবিকরা। এর মধ্যে একজন ইমাম।যার ইমামতিতে হয়েছে ঈদের জামাত।
সেই ইমাম ছিলেন জাহাজের ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ। প্রথমে দেশে ফেরার অনুভূতি বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের মাটিতে ফিরে এসেছি, মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি এটার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পুরো দেশ আমাদের জন্য দোয়া করেছে। বিশ্বের যেখানে বাংলাভাষী মানুষ ছিল, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই দোয়া করেছেন। উনাদের প্রতি এ কৃতজ্ঞতা শেষ হবার নয়। উনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা মজলুম অবস্থায় ছিলাম। জুলুমের শিকার ছিলাম। রোজা অবস্থায় ছিলাম। ওই অবস্থায় দেশবাসীর জন্যও দোয়া করেছি। যাতে সবাইকে সুস্থ রাখেন, নেক হায়াত দান করেন।
ঈদের জামাতে ইমামতি প্রসঙ্গ তুলতেই চোখ ছলছল করে এ সমুদ্রজয়ী নাবিকের। বললেন, আমাদের ক্যাপ্টেন স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ঈদের নামাজ পড়াতে। কলিগরা সবাই সাপোর্ট করেছিলেন। আমি ঈদের নামাজ পড়িয়েছিলাম।
এর আগে কখনো জাহাজে ঈদের নামাজ পড়িয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এর আগেও জাহাজে ঈদের নামাজ পড়িয়েছি। আমাদের জাহাজে নির্ধারিত কোনো ইমাম থাকেন না। যারা নামাজ পড়েন, কলিগরা সাপোর্ট করলে জামাতে নামাজ পড়ানো হয়। তবে এবারের ঈদের নামাজ ছিল ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, জলদস্যুদের বন্দিদশায় জিম্মি জাহাজে।
সেদিনের অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, জলদস্যুরা ঈদের নামাজ পড়তে দিছে। আমরা নামাজ পড়েছি। আত্মীয়-স্বজনকে মিস করেছি। ওই মুহূর্তে আমাদের দুশ্চিন্তা ছিল, আমরা জীবিত ফিরে আসবো কিনা! আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। মোনাজাতের মধ্যে আরবিতে দোয়া করেছি, আল্লাহ যেন জলদস্যুদের রহমত করে। আমরা যেন মুক্তি পাই। আল্লাহ কবুল করেছেন। দেশবাসীর দোয়া ছিল। সরকারের সাপোর্ট ছিল। আমাদের কোম্পানির সাপোর্ট ছিল।
ঈদের দিন কী খেয়েছিলেন জানতে চাইলে বলেন, ঈদের দিন নরমাল খাবার খেয়েছি। দুব্বার মাংস যেভাবে নিউজে আসলে সে রকম নয়। ওদের জন্য আনা হতো। মাঝেমধ্যে আমাদের একটু শেয়ার করতো। এমন না যে, কনটিনিউ দুব্বার মাংস খাইয়েছে। ধরেন ওদের জন্য ১০টি দুব্বা এনেছে, আমাদের একটি বা অর্ধেক দিয়েছিল।
মুসলিম হওয়ায় জলদস্যুরা কিছুটা নমনীয় ছিল। এমন ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা জুলুম করে ওদের কাছে ধর্মকর্ম আর কী! আমরা ২৩ জন মুসলিম ছিলাম। আমরা রোজা অবস্থায় ছিলাম। এতে তারা একটু সফট ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল।
জিম্মিদশার প্রথম দিন ইফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কুককে একটু সুযোগ দিয়েছিল ইফতার রেডি করার জন্য।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :