বরগুনা: কালেক্টরেট ও জেলা পরিষদ সংলগ্ন দিঘির পার সড়ক ধরে হাঁটলে চোখে পড়বে চারা গাছের সারি। সবই কৃষ্ণচূড়া। লাল কমলার মিশ্র ছোঁয়ায় যার পাপড়ি একদিন রাঙাবে শহরের আকাশ।
সময় লাগবে কিছুটা। কিন্তু যেদিন এই গাছগুলো ফুলে ফুলে ঝলমল করবে সেদিন হয়তো কেউ ভাববে এই পথের রূপ বদলেছিল একদল স্বপ্নবান তরুণের হাতে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বরগুনার জনপ্রিয় দর্শনীয় এলাকা কালেক্টরেট ও জেলা পরিষদের দিঘির পারে সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণের 'সবুজ বিপ্লব' কর্মসূচি আয়োজন করে স্থানীয় জলবায়ু সচেতন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার ইয়ুথ নেটওয়ার্ক।
শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়াতে তাদের সবুজ বিপ্লব কর্মসূচিতে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা তরুণরা, সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশপ্রেমী নাগরিকরা অংশ নেন।
এসময় তরুন ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক মহিউদ্দিন অপু, ব্যান্ড শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী দিপু রায়হান, প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্রী আতিক রহমান এবং দুর্বার ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সভাপতি ইবরার হোসেন নিঝুম সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আলোকচিত্রী আতিক রহমান বলেন, প্রকৃতি আমাদের ক্যামেরায় ধরা দিলেও তার সত্যিকারের রক্ষাকবচ হতে হয় হাতে মাটি লাগিয়ে। যারা আজ গাছ রোপণ করছে ভবিষ্যতের বরগুনায় তাদের চিহ্ন রয়ে যাবে রঙে ও ছায়ায়।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যান্ড শিল্পী দিপু রায়হান বলেন, গানের মতোই পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগও মানুষের হৃদয় নাড়া দেয়। গাছ রোপণ যেন আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার অংশ হয়ে ওঠে। তরুণদের স্বপ্নে এই শহর শুধু একটি মানচিত্রের বিন্দু নয় বরং প্রকৃতিবান্ধব এক নতুন পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠুক।
ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট সাংবাদিক মহিউদ্দিন অপু বলেন, বড় শহরগুলোর দিকে তাকিয়ে প্রায়ই বলি ওখানে গাছ নেই, বাতাস বিষাক্ত। কিন্তু ছোট শহরগুলো এখনো বদলানোর সুযোগ রাখে এবং তরুণদের এই প্রয়াস সেই সম্ভাবনার দিগন্ত আরও প্রশস্ত করে। গাছ বড় হবে, ফুল ফোটাবে, ছায়া দেবে। হয়তো তখন কেউ নাম মনে রাখবে না।
কিন্তু প্রকৃতি ভুলবে না। পাতার দোলায়, বাতাসের গন্ধে, মাটির গভীরে থেকে যাবে তাদের স্পর্শ। এভাবেই দিঘির পাড়ের এই সড়ক একদিন হয়ে উঠবে তরুণদের স্বপ্ন ও সচেতনতার এক জীবন্ত নিদর্শন। প্রকৃতির ছায়ায় শান্তির শহর গড়তে এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক সারা দেশে।
দুর্বার ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সভাপতি ইবরার হোসেন নিঝুম বলেন, আমরা শুধু গাছ লাগাইনি বরং ছড়িয়ে দিয়েছি একটুকরো বার্তা। যেখানে এই শহর শুধু কংক্রিটের দেয়ালে আটকে থাকবে না বরং তরুণদের স্বপ্নে গড়ে উঠবে সবুজে মোড়ানো এক শহর। আর কৃষ্ণচূড়া শুধুমাত্র দৃষ্টিনন্দন গাছ নয় এটি গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে উষ্ণতা আর নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধে রঙ ও ছায়ায় ভরা এক প্রতিবাদ।
এআর