রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় ১৩ দিন পিছিয়ে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর।
একই দিনে হিন্দু ধর্মের উৎসব মহান দুর্গাপূজার ষষ্ঠী। তাছাড়া এর আগের দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার ছুটি। এমন সময়ে নির্বাচনেয় তারিখ ঘোষণায় সনাতন ধর্মাবলাম্বী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের বিষয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। ক্ষোভের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।
ছাত্রনেতারা বলছেন, সুকৌশলে পূজার ছুটির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে। এটি সুস্পষ্ট, কমিশন সনাতনীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলা আছে এমন দিনেই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে কে কবে বাড়ি যাবেন এটা দেখা এটা কমিশনের দেখার বিষয় না।
এর আগে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিল পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য পূর্বনির্ধারিত তফসিলের সময় যথেষ্ট হচ্ছে না। আমরা আবাসিক থেকে ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি, ডোপ টেস্টের জন্য সময় প্রয়োজন। নির্বাচনী সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’
সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ৩১ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ এবং ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত; প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। সকল প্রক্রিয়া শেষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং একই দিন ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশকিছু দাবি ও ছাত্রদলের দুই মাস সময় চাওয়ার ‘অনুরোধের’ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ও আজ দুই দফা নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভা বসে।
গতকালে সভা শেষে বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় ৫ দিন বৃদ্ধিসহ তিনটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ানো ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জরুরি সভায় বসে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের নতুন সময় জানান তারা।
এদিকে নির্বাচনের নতুন সময়কে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। দুপুর দুইটায় বিক্ষোভ মিছিলে শাখার সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘একাধিকবার কমিশন ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বসেছে।
সেখানে সবাই ১৫ তারিখেই নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিলেও একটি দলকে সুবিধা দিতে নির্বাচন পিছিয়েছে। আমরা বলবো ১৫ তারিখেই নির্বাচন হতে হবে। কারণ নতুন যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে আমাদের সনাতনী ভাইদের ধর্মীয় আবেগ জড়িত রয়েছে। তারা সবাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবে। আর তাদের নির্বাচনের বাইরে রেখে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন সম্ভব না।’
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ, ‘রাকসু নির্বাচন কমিশন এককথায় মশকরা শুরু করেছে। তারা সুকৌশলে পূজার ছুটির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে। এটি সুস্পষ্ট, তারা আমাদের সনাতন ভাই বোনদের এই নির্বাচনের বাহিরে রাখতে চায়। এ এক বিরাট প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশনকে বলবো, যদি মেটিক্যুলাস ডিজাইনের নির্বাচন করার স্বপ্ন ঘুনাক্ষরে চিন্তা করেন, তাহলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষষ্ঠীর দিন ভোট গ্রহণ! কয়জন হিন্দু শিক্ষার্থী ভোট প্রদানের জন্যে সেদিন ক্যাম্পাসে থাকবে? আবার ২৯ তারিখ থেকে দূর্গা পূজার বন্ধ। রাবিতে ছুটির ২-৩ দিন আগ থেকেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়া শুরু হয়। এবার ভোট দেয়ার জন্যে দেরীতে যাবে, নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের মাঝে রাকসু কেন্দ্রিক এমন কোনো সচেতনতাও সৃষ্টি করা হয়নি।’
সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পেছানোর সম্পূর্ণ বিপক্ষে ছিলাম। আমরা ১৫ তারিখেই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমার ধারণা প্রশাসন ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারার ব্যর্থতাকে ঢাকতেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা নির্বাচন পেছানোর প্রতিবাদে আন্দোলনের পরিবর্তে ২৫/২৬ তারিখে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে।’
আরেক সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, ‘ছাত্রদলের অযৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে পেছানোর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে সনাতনী ভাই বোনদের উৎসবকে বিবেচনায় না নিয়ে প্রশাসন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলা আছে এমন দিনেই তারিখ ঘোষণা করেছি। এখানে কে কবে বাড়ি যাবেন এটা দেখা এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা কোনো পক্ষপাত না একটি অংশগ্রহনমূলক ও সুুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে চাই। এতে আমাদেও কিছু কাজের জন্য নির্বাচন পেছানো হয়েছে।
এআর







































