• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষিতদের মধ্যে ডিভোর্সের প্রবণতা বেশি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১, ২০২০, ১১:৩৬ এএম
শিক্ষিতদের মধ্যে ডিভোর্সের প্রবণতা বেশি

ঢাকা : দেশে অনেকাংশে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ডিভোর্সের মধ্যে শিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) ফেনীর কারাগারে ভুক্তভোগীকে বিয়ে করা ধর্ষণ মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। জামিন শুনানিকালে পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, আমাদের দেশে অনেকাংশে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে ডিভোর্সের মধ্যে শিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা তো নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছি। আসলে ব্যক্তিগতভাবে দুই-একটি পত্রিকার রিপোর্ট দেখে খুব অফেন্ডেড (অপরাধ বোধ) হয়েছি। যেখানে লেখা হয়েছে ‘ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে’ এভাবে তো রিপোর্ট হওয়া উচিত না। আবার নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে এ ধরনের বিয়েতে ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে।

‘যে যা-ই সমালোচনা করুক, আমরা এটাকে উৎসাহিত করবো’ এমনটি উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে এখন সমাজে মানুষের সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, ভাঙতেও সময় লাগে না। দেখবেন আমাদের দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। শিক্ষিত লোকদের মধ্যে বেশি হচ্ছে বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম।’

শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী জিয়ার জামিন প্রার্থনা করে বলেন, যেখানে মামলায় মেয়েটা বলছে, আমি তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসি, তার সঙ্গে আমার মনোমালীন্য ঠিক হয়ে গেছে। এখানে দেখতে হবে অন্যায় কিছু হয়েছে কি-না।

মেয়েটা বলছে, আমার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক কিন্তু বিয়ে না করায় থানায় মামলা করা হয়েছে। এটা নিয়ে জজ কোর্টেও আপস করার চেষ্টা করেছে মেয়েটি। তারপর তারা হাইকোর্টে এসেছে।

সবার উপস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে, এখানে অন্যায়ের কী হয়েছে। আর এভাবে কথায় কথায় যদি ধর্ষণের মামলা হয়ে যায়, যেখানে ধর্ষণের কোনো ভিত্তি নেই, কোনো মেডিকেল রিপোর্টও নেই। তারপরও কেন জামিন হবে না।

আদালতে সংযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মাই লর্ড এমন আদেশ দেওয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে তাদের সংসারে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। বিয়ে নামক কথার কারণে জামিন হয়ে গেল তারপরে যাতে সংসার ভেঙে না যায়। সে জন্য কোনো নির্দেশনা বা কঠোরতা দিয়ে দেওয়া যায় কি-না ভেবে দেখবেন।

হাইকোর্ট আরো বলেন, মিস্টার ডিএজি ঘর সংসার কি কোনো কঠোরতা দিয়ে হবে। ১৫/২০ বছর সংসার করার পরও ঘর ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষিত লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দুইজনই কোর্টে এসেছে; দেখা গেছে তাদেরও এতদিনের সংসার ভেঙে গেছে। আদেশ-নিষেধ নিয়ে কি ঘর সংসার টেকানো যাবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটা শর্ত দিয়ে জামিন দেওয়া যায় কি-না বিষয়টি বিবেচনা করতে। তখন আদালত বলেন, আমরা যদি কোনো শর্ত দিয়ে দেই, মেয়ের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করলে জামিন বাতিল হবে তাহলে দেখা যাবে মেয়ে যদি বলে আমাকে আগে ১০ বিঘা সম্পত্তি লিখে দিতে হবে, সমাজে এমন ঘটনা কিন্তু ঘটছে। সব থেকে বড় কথা হলো, দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্কটাই আসল।

আদালত বলেন, প্রযুক্তির কারণে, ফেসবুকের কারণে এখন সমাজে মানুষের সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, ভাঙতেও সময় লাগে না। জামিনের অপব্যবহার করলে ওই নারী তো অভিযোগ আনতেই পারবে। আমরা আশা করবো সংসারটা ভালোভাবে চলুক। আসামিপক্ষের আইনজীবীও তখন বলেন, ‘আমার এলাকার বাসিন্দা আমিও বিষয়টি খেয়াল রাখব।

পরে আদালত বলেন, রুল দিলাম, জামিন দিলাম, অপব্যবহার করলে জামিন বাতিল করতে পারবে। আর যদি প্রমাণিত হয় যে জামিনের জন্য বিয়ে তাহলে কিন্তু জামিন বাতিল হবে। ঠিক আছে এক বছর দেখি এই বলে আদালত এক বছরের জামিন দেন।

উল্লেখ্য, মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর ৮ নম্বর চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামে। গত ২৭ মে ভোরে একই ঘরে অবস্থান করা অবস্থায় গ্রামবাসী জিয়া ও অভিযোগকারী মেয়েটিকে আটক করে। স্থানীয়রা দুজনকে বিয়ে দিতে চাইলে ছেলের বাবা আবু সুফিয়ান মেম্বার রাজি হননি। সেদিন মেয়েটি সোনাগাজী থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ একইদিন গ্রেপ্তার করে জিয়াকে।

পরে উভয়পক্ষের সম্মতি থাকলে বিয়ের ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে গত ১ নভেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৯ নভেম্বর ফেনী কারাগারে আসামি জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই নারীর। এরপর ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন জিয়া। শুনানি শেষে আজ আসামি জিয়াকে এক বছরের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!