• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
১২ কোটিতে সমঝোতা

সেই আইনজীবীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩, ২০২২, ০৩:১৯ পিএম
সেই আইনজীবীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

ঢাকা: রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মো. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের নামে হওয়া মামলা সমঝোতার অভিযোগে এক আইনজীবীর সব অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।

আইনজীবী ইউসুফ আলী নিজেই অ্যাকাউন্ট জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রোবাবর (৩ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

১২ কোটি টাকায় সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অসত্য।’

তিনি বলেন, “আমরা তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউনূসকে ‘চুবানি’ দিয়েই সুদে-আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কত পেয়েছি সেটা বলতে চাই না। এটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার গোপনীয় চুক্তি। আমার মক্কেল যেটা দিয়েছেন, সেটাই আমি পেয়েছি।

‘আমাকে নিয়ে ১২ কোটি টাকার যে গল্প বানানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু না। আমি সকালে গিয়ে দেখেছি, আমার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত তিনটি অ্যাকাউন্ট আর আমার পার্টনারের দুইটা আর আমার চেম্বারের একটা অ্যাকাউন্ট। সবগুলো অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।’

আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, ‘লিখিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা প্রদান করার পর প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী বিজ্ঞ তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকাতে উপস্থিত হয়ে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে তাদের স্ব স্ব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একইভাবে তাদের অনুরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন সকল রিট মামলা, আদালত অবমাননার মামলা এবং গ্রামীণ টেলিকম অবসায়নের প্রার্থনায় আনীত আলোচিত কোম্পানি ম্যাটার নং ২৭১/২০২১ প্রত্যাহার করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উক্ত মামলাসমূহ প্রত্যাহার করার পর গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীবৃন্দ সন্তুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে আমাদের ফিস বাবদ ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে আমাদের ফিস প্রদান করেছেন।’

এদিকে ১২ কোটি টাকায় সমঝোতার খবর জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালত বলেছে, ‘আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।’

আদালত আরও বলে, ‘কোর্টকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন ওঠে।’

আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন ইউসুফ আলী।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন হয়।

গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াই শ কোটি টাকার বেশি। এই পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী।

এ ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের নামে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!