• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সাক্ষাৎকারে বিএসইসি চেয়ারম্যান

‘দুই বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ একটা ডিজিটালাইজড মার্কেট পাবো’


মেহেদী হাসান সজল জুলাই ১৫, ২০২১, ১১:১৪ এএম
‘দুই বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ একটা ডিজিটালাইজড মার্কেট পাবো’

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

ঢাকা : সংকটাপন্ন শেয়ারবাজারের হাল ধরতে গত বছরের ১৭ মে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক রুবাইয়াত-এর আগে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিএসইসির দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরে করোনাকালীন সময়ের মধ্যেও তার অর্জন শেয়ারবাজারকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এশিয়ার সেরা বাজার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। শেয়ারাবাজারের সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেন সোনালীনিউজ-এর সঙ্গে।

বিএসইসি চেয়ারম্যানের একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন স্টাফ রিপোর্টার মো. মেহেদী হাসান-

সোনালীনিউজ : আপনি বিএসইসির দায়িত্বগ্রহণ করেছেন এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল। এই সময়ে আপনার অর্জন কতটুকু? আর কোন সেক্টরগুলোতে এখনও পরিপূর্ণ সুফল আসেনি, যেগুলোতে সামনে পাধান্য দিবেন বলে মনে করছেন?

শিবলী রুবাইয়াত : অর্জন বলতে যা বুঝায় তার এখনও তেমন কিছুই হয়নি। বাজারে আসলে এত এত সমস্যা যা অল্প সময়ে দূর করা সম্ভব না। বাজারে মানুষ প্রতিনিয়ত চালাকি করার চেষ্টা করছে, যা সল্প সময়ে রুলস করে বন্ধ করা কঠিন বিষয়। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও পুরোপুরি কর্পোরেট গভর্নেন্স আনা এখনও সম্ভব হয়নি। তাই আমি নিজেকে সফল বলবো না। শাস্তি দিয়ে আসলে কতটা সুশাসন নিশ্চিত করা যায়?

যদি নিজেদের মধ্যে সুশাসন বোধ তৈরি না হয় তাহলে শাস্তি দিয়ে তাৎক্ষণিক কোন বিষয়ের সুশাসন নিশ্চিত করলেও তা পরবর্তীতে ঘটবে না সেটার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের উপর সম্মানবোধটা বাড়ানো জন্য আমি বলবো। কেননা বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে কেউ বড় হতে চাইলে সেটা নিতান্তই বোকামি হবে। মনে রাখতে হবে বিনিয়োগকারীরাই তাদের পুঁজিদাতা। তাদেরকে সম্মান করে রিটার্ন ঠিকভাবে পরিশোধ করলেই কেবল মার্কেটে সুস্থ পরিবেশ ফিরবে।

সোনালীনিউজ : আমাদের স্টক মার্কেট শুধুমাত্র ইকুইটি নির্ভর। আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর বন্ড মার্কেটের উপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে ব্যাংক ইন্টারেস্ট ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্ড মার্কেটকে কতটুকু সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে?

শিবলী রুবাইয়াত : বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজ শুরু করার পর যে চ্যালেঞ্জটি ভেবেছিলাম আসলে কাজ করতে গিয়ে অতটা কঠিন মনে হচ্ছে না। বিকল্প বিনিয়োগ ব্যবস্থা না থাকলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্যই সুযোগ সংকুচিত হয়। এক্ষেত্রে বন্ড নিয়ে যারা আসে তারা যদি সৎ ও নিষ্ঠার জায়গাতে অটল থাকে তাহলে বন্ড মার্কেট ইকুইটির বিকল্প সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এদিকে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া মানিই হলো লসের সম্মুখীন হওয়া। তাই অনেকেই এখন ব্যাংক থেকে অধিক হারে লোন না নিয়ে বন্ডের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হচ্ছে আর ব্যবসায়ীও কম হারে লাভ দিয়ে টাকা নিতে পারছে। মোট কথা বন্ড বাজারে একটা চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এখন বাজারে বন্ড আসলেই সেখানে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। সুকুক বন্ডের কথাই যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানে ৫০ গুন বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাই বন্ড নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান  অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

সোনালীনিউজ : মিউচুয়াল ফান্ডের এক্টিভিটি ইকুইটি ও বন্ডের মতো তেমন লক্ষ্যনীয় নয়। এ সেক্টরের ভবিষ্যৎ কেমন? সেক্টরটির উন্নয়নে আপনাদের পদক্ষেপ কী?

শিবলী রুবাইয়াত : মিউচুয়াল ফান্ড হতে হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের একটা জায়গা। কেননা এর ফলে একদিকে বিনিয়োগকারীরা যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি ক্যাপিটাল মার্কেটেরও উন্নয়ন হবে। এই সেক্টরটা উন্নয়নেও আমাদের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এর একটা সুফলও মার্কেটে এসেছে। এখন ডিভিডেন্ড দেয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ কোয়াটারে প্রায় ৯৫ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড ঠিকভাবে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তাছাড়া নতুন নতুন ফান্ডের আবেদন আসছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আসছে। এই সেক্টরের জন্য বড় একটা সুবিধা হলো যারা মার্কেট ভালো বুঝে না তাদের অর্থও প্রশিক্ষিত লোকবল দ্বারা পরিচালিত হয়। এই সেক্টরে সুশাসনের অনেকটা অভাব ছিলো যেটা আমরা অনেকটাই নিশ্চিত করতে পেরেছি। এখন তাই আস্থার জায়গাটাও ফিরতে শুরু করেছে।

সোনালীনিউজ : বিদেশী বিনিয়োগকারী আনায়নে বিএসইসির উদ্যোগে রোড শো করা হয়েছে বা হচ্ছে। কেবল রোড শো দিয়ে কি বিদেশী বিনিয়োগকারী আনা সম্ভব? এছাড়া আপনারা আর কোন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন কী?

শিবলী রুবাইয়াত : বিদেশী বিনিয়োগকারী আনায়নে রোড শো হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমাদের অবস্থানের জানান দিচ্ছি আমরা। আমরা আমাদের মার্কেটের অবস্থাটা বিশ্ব বাজারে জানাচ্ছি রোড শো’র মাধ্যমে। আমাদের মার্কেট সম্পর্কে যদি বিদেশীরা না জানে, না বুঝে তাহলে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নিবে কিভাবে?

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কেমন, আমাদের দেশের কোম্পানিগুলোর অবস্থান কেমন, ইত্যাদি বিষয়ে জানান দেয়ার জন্যই আমরা রোড শো করি। এটা যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কাজ, তবুও আমরা জাতীয় স্বার্থে কার কি কাজ সেটা বিবেচনায় না নিয়েই মার্কেটকে ভালো করার জন্য সমান্তরালভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমাদের মার্কেটে নিয়ে আসতে আরও কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সোনালীনিউজ : ফান্ডামেন্টালভাবে দুর্বল যেসব কোম্পানি তারাই বারবার আলোচনায় আসে। তারাই বিভিন্ন অপকৌশলে ফান্ড রেইজ করিয়ে নেয়। তাদেরকে কিছুটা শাস্তির আওতায় আনা হলেও তা তাদের হাতিয়ে নেয়া অর্থের তুলনায় খুবই নগন্য। এক্ষেত্রে আপনাদের কোন পরিকল্পনা আছে কী?

শিবলী রুবাইয়াত : লোভে পড়ে এখন মানুষ সর্বক্ষণই লাভ করতে চায়। আমরা ওই সমস্ত দুর্বল কোম্পানিগুলোর ফান্ডামেন্টাল ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আসলে এগুলো আমরা গোপনেই করে যাচ্ছি। যেসমস্ত কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দুর্বলতা নিয়ে আমরা কাজ করছি তা যদি প্রকাশ করে দেই তাহলে মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। সেজন্যই আমরা এ নিয়ে কাজ করলেও তা গণমাধ্যমে জানাই না। আমরা দুর্বল ফান্ডামেন্টাল কোম্পানিগুলোকে প্রথম ডেকে হুঁশিয়ারি দেই। তারপরও যদি তারা ঠিক না হয় তাহলে পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা নেই।

সোনালীনিউজ : মাল্টিন্যাশনাল এবং সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকভুক্ত করার প্রক্রিয়া বহু বছর যাবৎ চলমান রয়েছে। আপনি দায়িত্ব নেয়ার পরও এ নিয়ে অনেকবার পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। ওই সমস্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে কতটা সাফল্য পেয়েছেন?


শিবলী রুবাইয়াত : আমরা ওই সমস্ত মাল্টিন্যাশনাল এবং সরকারি কোম্পানিগুলো পাওয়ার জন্য সর্বদা ওয়েলকাম জানাই। তবে এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় এবং কোম্পনিগুলোর নিজস্ব উদ্যোগ থাকতে হবে। কোম্পানিগুলো যদি না আসতে চায় তাহলে আমরাতো জোর করে নিয়ে আসতে পারবো না। আমরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে আনতে পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ার থেকেও বেশি সুবিধা দিচ্ছি।

ইন্ডিয়াতে যেখানে নূন্যতম ২০ শতাংশ শেয়ার স্বদেশী বিনিয়োগকারীদের দিয়ে লিস্টেট থাকার বিধান রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১০ শতাংশ শেয়ার দিয়েও বিদেশি কোম্পানি তালিকায় আছে। তারা এই অল্প শেয়ারের বিনিময়ে ট্যাক্স সুবিধাও নিচ্ছে। তবুও আমরা চাই বিদেশি কোম্পানিগুলো যেন মার্কেটে আসে। আর সরকারি কোম্পানিগুলো আনতে আমাদের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিছু কিছু কোম্পানি আসার জন্য সিদ্ধান্তও নিচ্ছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান  অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

সোনালীনিউজ : আপনি দায়িত্বে আসার পর স্টক এক্সচেঞ্জকে পুরোপুরি অটোমেশন করার ব্যপারে একটা বার্তা দিয়েছিলেন। এই জায়গাতে আপনি কতটা সাফল্য কুড়িয়েছেন?

শিবলী রুবাইয়াত : মানুষ দ্রুতই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জও সেই গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে আমাদের একজন কনসাল্টটেন্ট জয়েন্ট করেছে। যদিও আমরা এখনও আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জকে পুরোপুরি অটোমেশন করতে পারিনি। তবে আমরা এর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ডিএসইতেও একজন ভালো আইটি জ্ঞান সম্পন্ন এমডি আসছে। তারপর আমাদের বিশ্ব ব্যাংকের যে ফান্ড আসার কথা তারও অনেকটা নিশ্চয়তা পেয়েছি।

সুতারং বিশ্ব ব্যাংকের ফান্ডিং, সিসিবিএল, সিডিবিএল, ডিএসই এবং বিএসইসি মিলে আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ একটা ডিজিটালাইজেশন মার্কেট পাবো বলে আশা করছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!