• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কেট খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ মার্জিন ঋণ: আলমগীর হোসাইন


আবদুল হাকিম জুন ৪, ২০২২, ০৪:১৫ পিএম
মার্কেট খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ মার্জিন ঋণ: আলমগীর হোসাইন

মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের সিইও মো. আলমগীর হোসাইন।

ঢাকা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলংকা সংকট এছাড়াও ডলারের দরে অস্থিরতাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সমস্যা এবং ভবিষ্যত পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা নিয়ে সোনালী নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপ করেছেন মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের সিইও মো. আলমগীর হোসাইন। স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ: পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সময় অস্থিরতা দেখা যায় এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

আলমগীর হোসাইন: মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। ২০১০ সালে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এর পর তো কারো মার্জিন ঋণ নেওয়া উচিত না। মার্কেট খারাপ হওয়ার অন্যান্য কারণের মধ্যে মার্জিন ঋণ অন্যতম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সবাই সেই একই ভুল বার বার করতে পছন্দ করে। আমাদের বিনিয়োগকারীরা অনেকে কিছুই বুঝে না। এদের ধারণা আমাকে নির্দিষ্ট শেয়ারে লাভ করতেই হবে। এরা যখন বেশি দামে শেয়ার কিনে এই সুযোগটা নেয় যারা স্মার্ট বিনিয়োগকারী তারা। তারা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে লাভ করে বের হয়ে আসতেছে এটা মার্কেট খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ। অনেক স্টক আছে যেগুলো আন্ডার রেটে আছে কিন্তু সেগুলোর দিকে মানুষের আগ্রহ নেই। তবে ইদানিং মার্কেট কিছুটা ভালো হয়েছে রেগুলেটরি বডি বা সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যদি জেনে বুঝে বিনিয়োগ না করেন তাহলে এটাও ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যাবে।
 
‘এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর ওয়েবসাইটে সকল কোম্পানির তথ্য পাওয়া যায়। শুধু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে দেখলে বুঝা যায় কোন কোম্পানি কখন ভালো করেছে বা খারাপ করেছে অথবা এর আগে কেমন লভ্যাংশ দিয়েছে, সব বিবেচনা করে যদি বিনিয়োগ করে তাহলে মার্কেটও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু সেটা না করে যে যার ইচ্ছা মতো বেশি লাভের আশায় শেয়ার কিনে ধরা খায়। এজন্য অতি লোভ কখনই ভালো না। বুঝে শুনে অল্প লাভ করলেও বড় ধরণের লস থেকে বাঁচা যায়।’

সোনালী নিউজ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলংকার সংকট এবং ডলারের দর অস্থিরতায় বাজারে কেমন প্রভাব পড়েছে?

আলমগীর হোসাইন: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংকটগুলো এবং সর্বশেষ ডলারের দরে অস্থিরতা সব মিলে প্রভাব পড়েছে আমাদের শেয়ারবাজারেও, কারণ এই জায়গাটা খুবই সেনসেটিভ। দূরে কোথাও কোন সংকট তৈরি হলেও এই বাজারে তার প্রভাব পড়ে। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারী একটা বিষয়। এমনিতে আমাদের বাজার স্থায়ী না হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চায় না, তার উপর বিভিন্ন সময় সংকট তৈরি একটা বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বিদেশিরা সবসময় নির্ভরযোগ্যতা পছন্দ করেন। আমাদের দেশে অনেকে বিনিয়োগে আসতে আগ্রহ দেখান আবার কোন এক কারণে হয়তো অজানতেই পিছনে চলে যান। আমাদের মূল ইনডেক্সটা ভালো রাখতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগগুলো সহজে পাওয়া যাবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এসমস্ত বিনিয়োগকারী যারা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী তাদের নিয়ে আসতে।

‘ইদানিং আমাদের ইনডেক্সটা খারাপ হওয়ার কারণ হলো অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার দর কোন কারণ ছাড়াই কমেছে। তবে এর পিছনে দায়ী মনে করি মার্জিন ঋণকে। কারণ বিনিয়োগকারী একটা অ্যাকাউন্ট খুলে প্রথমে বলে কত টাকা লোন দিবেন। এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ যারা ব্যবসা বোঝে না তাদের মার্জিন ঋণ না দেওয়াই উত্তম। আমরা এখনও মার্জিন ঋন দেই না। কিন্তু অনেকে এসে চায়। এটার চাহিদা অনেক।’

সোনালী নিউজ: বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে করপোরেট ট্যাক্স কেমন হলে ভালো হয়?

আলমগীর হোসাইন: এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্সে ব্যবধান রাখা উচিত। এতে করে ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসবে। একটা বিষয় হলো মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত মনে বাধ্যবাধকতার মধ্যে না গিয়ে স্বাধীন থেকে যদি কম টেক্স দেওয়া যায় তাহলে সেটাই করে। এজন্য করপোরেট টেক্সটা তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্তের মধ্যে বড় ব্যবধান রাখা একান্ত প্রয়োজন।

সোনালী নিউজ: বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সার্কিট ব্রেকার প্রয়োগের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

আলমগীর হোসাইন: কয়েকদিন পর পর সার্কিট ব্রেকারের যে বিষয়টি সামনে আসে এটা হয়তো সাময়িক কিছুটা সমস্যা সমাধান হয় কিন্তু ফ্রিলি কেনা বেচা করা যায় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন কন্ডিশন চায় না। যদি আপনি কন্ডিশন বেশি দেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ নিয়ে আসবে না। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাজারে যত বেশি ফ্রিলি বেচা কেনা করা যাবে ততটা সমৃদ্ধ হবে। বিনিয়োগকারীরা ফ্রিলি কেনা বেচা করতে পারবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যবেক্ষণে রাখা বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। যাতে অসাধু বিনিয়োগকারীরা সুযোগ নিতে না পারে।

সোনালী নিউজ: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড কেমন ভুমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?

আলমগীর হোসাইন: মার্কেটকে ভালো করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডেও অনেক বড় ভুমিকা রাখতে পারে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড যদি মিনিমাম একটা লভ্যাংশ নিশ্চিত করতে পারে তাহলে যারা ছোট বিনিয়োগকারী বা সাধারণ বিনিয়োগকারী আছেন তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকে এফডিআর করে যে লাভ পাবে তার থেকে এই সেক্টরটা হতে পারে অনেক নিরাপদ এবং উপযোগী জায়গা। আমরা যদি বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করতে পারি যে মিউচুয়াল ফান্ডে তোমাকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ লাভ দিবো তাহলে সে আর সুদ খেতে হচ্ছে না। এখান থেকে ভালো একটা প্রফিট পেয়ে যেতে পারে। যা ব্যাংকেও পাবে না। এক্ষেত্রে রেগুলেটর বডি একটু পর্যবেক্ষণে রাখলে যথেষ্ট।

সোনালী নিউজ: চলতি বছরেই চালু হতে যাচ্ছে এটিবি এবং ইটিএফ নতুন প্রোডাক্টগুলো বাজারের জন্য কতটুকু সহায়ক হবে বলে মনে করেন?

আলমগীর হোসাইন: অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সাদৃশ্য প্রোডাক্ট এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এ সমস্ত পোডাক্টগুলো আমাদের বাজারে অনেক আগে আসার কথা ছিলো। আমাদের পাশের দেশ ভারতে অনেক আগে চালু হয়েছে। যত বেশি পোডাক্ট মার্কেটে আসবে মার্কেট তত শক্তিশালী হবে তবে আমাদেরকে অবশ্যই মুল মার্কেটের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ মুল মার্কেট খারাপ রেখে অন্য কিছুই কার্যকরী হবে বলে মনে করি না। এই পোডাক্টগুলো দেরিতে হলেও আমরা পাচ্ছি এটা ভালো দিক তবে এর যথাযথ ব্যবহারও আমাদের করতে হবে নয়তো সামনে আরো ভালো প্রোডাক্ট আনতে অনুপ্রেরণা পাবে না। বাজারের সব কিছুই একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িত। একটা রেখে আরেকটা ভালো করা কষ্টকর।

সোনালী নিউজ: প্রতি বছরে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি আলোচনায় থাকে, এক্ষেত্রে কোন সুবিধা রাখলে তা বাজারের জন্য সহায়ক হবে?

আলমগীর হোসাইন: কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে থাকে। আমি মনে করি কোন রকম শর্ত ছাড়াই সুযোগ দেওয়া হোক, কারণ এক দিকে আমাদের বাজার স্থায়ী না অন্যদিকে ট্যাক্স থাকে বড় অংকে এজন্য যাদের কালো টাকা আছে তারা মনে করে ক্যাশ টাকায় সাদা করতে পারলে সেটাই ভালো রিস্ক কম থাকে। যে কোন উপায়ে কালো টাকাগুলো যদি ইকোনমিতে আনা যায় তাহলে দেশের ইকোনমি চাঙা হবে। যত সহজে এ টাকা আনা যায় বাজার তত চাঙা হবে অর্থনীতি চাঙা হবে। সরকার অবশ্যই চায় দেশের পুঁজিবাজার ভালো করুক সেজন্য এই বিষয়টি যত সহজ হবে ততটা বাজারের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

সোনালী নিউজ: একটি সুন্দর পুঁজিবাজার পেতে কোন বিষয়গুলো আবশ্যক?

আলমগীর হোসাইন: কর্পোরেট গভর্নেন্স ২০১৫ এটা যদি মেনে চলতে পারে আর মনে হয় স্টক মার্কেটের দিকে তাকাতে হবে না। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক কি রোল প্লে করলো বা অন্যরা কি রোল প্লে করলো সেটা কেউ দেখবে না। যখন মানুষ বুঝতে পারবে, এখানে ইনকামের সুযোগ আছে বা শেয়ারটা কম দামে আছে সুতরাং সেখানে মানুষ ইনভেস্ট করবেই। তবে আগে বুঝতে হবে শেয়ারটা আন্ডার প্রাইজ নাকি ওভার প্রাইজ। আন্ডার প্রাইজ হলে সেটায় সুযোগ আছে।

‘সমস্যা হয় আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চার শ্রেণীর লোক রয়েছে, রিয়েল ইনভেস্টর, বুদ্ধিমান ইনভেস্টর যারা বুঝে শুনে বিনিয়োগ করে, আরেক শ্রেণি আছে যারা রিসার্স করে, (যারা রিস্ক নিতে চায় না তাদের জন্য আছে ‘মিউচুয়াল ফান্ড’), সর্বশেষ যারা সুযোগ সন্ধানী তারা ঘাপটি মেরে বসে থাকে। যখন কোন শেয়ার কম দামে চলে যায় তারা সেটার সুবিধা নেয়। এখন পর্যন্ত আমাদের মার্কেট অনেক আন্ডার প্রাইজে আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সব সময় অস্থির থাকে। কোন রেগুলেটর বলবে না কোন শেয়ার কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না।’

প্রফিটটা হলো লজিক্যাল সিস্টেম কিন্তু আমাদের অনেকে হতাশায় পড়ে যায় বা হুজুকে পড়ে যায়। যখন দেখে কোথাও লস হয়েছে এবার বাকি যে শেয়ার আছে সব বিক্রি করে দেয়। আর এই সুযোগটা নেয় যারা সুযোগ সন্ধানী তারা। একটা শেয়ার দর ১০ টাকা হলে সেটা যদি আন্ডার প্রাইজ হওয়ায় কেউ সাত টাকায় বিক্রি করে দেয়, এই সুযোগটা এক শ্রেণি কাজে লাগায় এবং লাভবান হয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী সরাসরি বিনিয়োগ করে সেটা অন্য কোন দেশে এই পরিমান নেই। যার কারণ ভালো করে না বুঝে বিনিয়োগ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ শিক্ষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘একজন বিনিয়োগকারীকে বুঝতে হবে, ইপিএস কী? ডিভিডেন্ট কী? মার্জিন লোনের বিষয়টা কী? কিন্তু না জানার সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছে। তবে আশার দিক হচ্ছে এখন রেগুলেটররা এইসব বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এবং আমরাও করবো যাতে সব বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হতে পারে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!