• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

শোকজ আতঙ্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ০৭:৩৪ পিএম
শোকজ আতঙ্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা

ঢাকা: দেশের ব্যাংকিং সংক্রান্ত অনিয়মের কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেই অনুমানের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিস দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে শোকজ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক মর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। আর এতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়া নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে নিজ চেম্বারে ডেকে শাসানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

গণমাধ্যমে ব্যাংকিং সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ার বিষয়ে বাছ-বিচার ছাড়াই অনুমানের ভিত্তিতে অন্তত তিনটি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে এই কারণ দর্শানোর নোটিস ইস্যু করেছেন কাজী ছাইদুর রহমান।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, ব্যাংকের অনিয়মের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। অথচ কোনো সংবাদেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য বা সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত অফিস নিয়ম অনুযায়ী, সহকারী পরিচালক বা উপ-পরিচালক পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তা যে কোনো বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ফাইল ইনিশিয়েট (দাপ্তরিক কার্যবলী শুরু করার প্রক্রিয়ার নাম) করে থাকেন। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত পরিচালক বা পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তাদের করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এটির প্রচলন খুব একটা নেই। কিন্তু কর্মকর্তাদের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর নিজেই।

ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার জেরে এসব কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিসে বলা হয়েছে, বিভাগের তথ্য কিভাবে সাংবাদিকরা জানতে পেরেছেন।

সম্প্রতি ডলার সংকট, ডলারের অস্বাভাবিক মুনাফায় জড়িত ব্যাংকের নাম, এসব ঘটনায় ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার সংবাদ, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিস, ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে ডলার পাচার, ঋণ কেলেঙ্কারি, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ দেখা দিয়েছে। শুধু কারণ দর্শানোর নোটিসই নয়, মৌখিকভাবে কয়েকটি বিভাগের কর্মকর্তাদের ভৎসনা করা হয়েছে। এমনকি সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথাও বলেছেন কাজী ছাইদুর রহমান।

বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ প্রকাশের পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি-সাময়িক নিষেধাজ্ঞার ঘটনা ইতোপূর্বেও ঘটেছে। গত জুলাই মাসে নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার দিনও গভর্নর ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে প্রতিবাদের মুখে ওই দিন বিকেলেই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেসব কর্মকর্তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তারা জবাব দিলেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। তবে ব্যাংকিং সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও পাওয়ার সুযোগ আছে। তাই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই গেছে-এটা বলা যাবে না ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে গণমাধ্যমের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে আরও সংকুচিত করবে। শুধু তাই নয়, এমন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী।

জানা গেছে, কাজী ছাইদুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকায় তার এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করেন না। এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হয়রানি করার বিষয়ে তাকে নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

এ ছাড়া নিজের বিভাগের না হলেও অন্য বিভাগের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নজিরও রয়েছে তার। এর বাইরেও মতিঝিল শাখা থেকে একটি বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এতে শাখা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান কার্যালয়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। অথচ ঢাকার বাইরের শাখাগুলো এসব অধিকার স্বাভাবিক নিয়মেই পরিপালন করতে পারছে।

এসব বিষয়ে জানতে কাজী ছাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!