• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৭ দিনে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করে জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স: এস এম নুরুজ্জামান


আবদুল হাকিম জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৮:১১ পিএম
৭ দিনে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করে জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স: এস এম নুরুজ্জামান

জেনিথ লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান।

ঢাকা: বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনাময় বীমা খাত। যদিও বর্তমান সময়ে গ্রাহকের অভিযোগে জর্জরিত এই খাতটি। বিশেষ করে বীমা দাবি পরিশোধে অনীহায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই খাত। তবে কিছু বীমা কোম্পানি এখনও গ্রাহকের চাহিদার আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি নতুন প্রজন্মের বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটির ব্যবসা উন্নয়ন, কর্মপরিকল্পনা এবং বীমা দাবি পরিশোধে সফলতাসহ সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে জেনিথ লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ: বীমা খাতে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন?

এস এম নুরুজ্জামান: বর্তমানে সময়ে মানুষকে বীমা খাতে আগ্রহী করতে দরকার সচেতনতা। বীমা খাতের প্রচারণা নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় এখাতের প্রচারণা বাড়ানো খুবই জরুরি। তবে আশার দিক হচ্ছে বাংলাদেশে পহেলা মার্চে বীমা দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি একটি যেমন আশার দিক অন্যদিকে এই দিবসকে কেন্দ্র করে বড় পরিসরে প্রচারণামূলক কিছু কার্যক্রম করা দরকার। এই প্রচারণা আরো বাড়াতে পারলে মানুষকে সচেতন করার সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও বীমার প্রয়োনীয়তা তুলে ধরতে পারলে এই খাতটি সমৃদ্ধ হবে। বিশেষ করে মানুষের বীমা দাবিগুলো যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারলে বীমা খাতে মানুষের আগ্রহ অনেক বাড়বে। তাই এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সোনালী নিউজ: বীমা দাবি পরিশোধে আপনারা কি ধরণের পদক্ষেপণ নিয়েছেন?

এস এম নুরুজ্জামান: আমরা বীমা দাবি আবেদনের পর অল্প সময়ে পরিশোধ করে থাকি। বর্তমানে আমাদের কোন বীমা দাবি পেন্ডিং নেই। প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেয়ার ৭ দিনের মধ্যেই এসব বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আমরা বীমা দাবির কাগজপত্র অনলাইন মাধ্যমে পাঠালেই দাবি পরিশোধ করে দেই। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের মূল কাগজপত্র পাঠাতে হয় না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দাবি উত্থাপনের মাত্র ৭ কার্য দিবসেই দাবি নিষ্পত্তি করা হয়। এছাড়া সকল বীমা দাবির টাকা গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে বীমা দাবির চেক গ্রহণের জন্য কোন গ্রাহকের সময় ক্ষেপণ করতে হয় না। আমাদের প্রধান কার্যালয় বা শাখা অফিসেও ধর্ণা দিতে হয় না। এমনকি চেক নগদায়নের জন্য গ্রাহককে ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। যথাসময়েই গ্রাহকরা তাদের বীমার টাকা হাতে পেয়ে যান।

সোনালী নিউজ: বিমা খাতের উন্নয়নে কি ধরণের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

এস এম নুরুজ্জামান: বিমা খাতের উন্নয়নে সব চেয়ে বেশি দরকার পুরনো কোম্পানিগুলোর পেন্ডিং দাবিগুলো পরিশোধ করা। কারণ বাজারে বীমা দাবি পরিশোধ করার ব্যাপারে খারাপ ধারণা আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরনো কোম্পানিগুলোর বীমা দাবি বেশি পেন্ডিংয়ে রয়েছে। এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তাহলে হয়তো মানুষের কাছে খারাপ ধারণাটা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও বীমা মেলাটা উপজেলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে এ খাতের প্রসার বাড়বে। কারণ মানুষের মধ্যে সচেতনা তৈরি করা দরকার। অনেকে বিমা কোম্পানিকে এমএলএম, হায় হায় কোম্পানি বা বীমার টাকা পাওয়া যায় না ইত্যাদি মনে করে, যেটা আদৌ ঠিক না। তাই যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনের ভুল ধারণা দূর করা এবং এর গুরুত্ব বুঝানো প্রয়োজন। 

এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের (আইডিআরএ) নতুন দায়িত্বে যারা আসছেন তারা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় যে সমস্ত কোম্পানিগুলোর ঝামেলা আছে। সেগুলোকে পুনরায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যে কোম্পানির কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের অপসারণ করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে। সব মিলে খুব ভালো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এসমস্ত নির্দেশনাগুলো যথাযথ ভাবে পালন করা গেলে এই খাতে কোন সমস্যা থাকবে না। তাই আমি মনে করি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মতো কাজ করতে পারলে এই খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

সোনালী নিউজ: ২০২২ সালে আপনারা কতটি বীমা দাবি নিষ্পত্তি এবং কত টাকা পরিশোধ করেছেন?

এস এম নুরুজ্জামান: ২০২২ সালে মোট বীমা দাবির সংখ্যা ৯৯৬টি। এসব বীমা দাবির অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৮২ টাকা। এর মধ্যে ৪৬টি মৃত্যুদাবি বাবদ ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৮ টাকা; ৮৯টি স্বাস্থ্য বীমা দাবি বাবদ ২৬ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা; ১০টি মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি বাবদ ২৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা; ৮২১টি এসবি বাবদ ৩ কোটি ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩ টাকা। এর আগে ২০২১ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফে সর্বমোট ৭৪১টি বীমা দাবি উত্থাপন হয়। এসব দাবি বাবদ ৩ কোটি ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯০ টাকা পরিশোধ করেছি আমরা। এসব বীমা দাবির মধ্যে গ্রুপ ও একক বীমার ৩৪টি মৃত্যু দাবি ২৭টি স্বাস্থ্য বীমা দাবি, ৫টি মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি, ৬৩৩টি এসবি এবং ৪২টি সমর্পণ মূল্য ছিল।

সোনালী নিউজ: নতুন বছরে জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের কাজের পরিধি বাড়াতে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

এস এম নুরুজ্জামান: নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে আমাদের সর্ব প্রথম টার্গেট হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়া। এছাড়াও গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। কোন গ্রাহক অসুস্থ হলে হেলথ পলিসি নেওয়া যেত না। আমরা এই বছরে হেলথ পলিসি চালু করেছি। মাসিক পেনশন নামে দুইটি পলিসি চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ পেনশনে মাসিক সুবিধা দিতে এটা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশনা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু করতে। আমরা যাতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা সব বিক্রি করতে পারি সেটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি আমাদের কর্মকর্তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। এটা আমাদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া পদক্ষেপের একটি। সারা বাংলাদেশে আমাদের সকল ব্রাঞ্চ অফিসেও এই ট্রেনিং ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। এই খাতে বিগত বছর থেকে বেশি বাজেট বরাদ্দ করে প্রতি মাসে ট্রেনিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের কর্মীরা দক্ষ হবে। দক্ষ হয়ে তারা ভালো পলিসি বিক্রি করতে পারবে। এর মাধ্যমে আমাদের নবায়ন বাড়বে এবং কোম্পানি সমৃদ্ধ হবে।

সোনালী নিউজ: জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগের পরিধি কেমন?

এস এম নুরুজ্জামান: যে কোনো ব্যবসায় সমৃদ্ধি অর্জনের প্রথম ধাপ সঠিকখাতে সম্পদ বিনিয়োগ ও সেখানে থেকে রিটার্ন। এক্ষেত্রেও বিগত বছরে আমাদের বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। শুধু বীমা দাবিই নয়, আমরা ২০২১ সালের চেয়ে সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করেছি। ২০২১ সালে আমাদের মোট বিনিয়োগ ছিল ১৯ কোটি ৫১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫৯ টাকা, যা ২০২২ সালে ২৮ কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের চেয়ে ৮ কোটি ৭০ লাখ ৭২ হাজার ৩৫ টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে আমাদের। এছাড়া মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি টাকারও বেশি।

সোনালীনিউজ/এএইচ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!