ঢাকা: বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিকূলতার কারণে দেশের শেয়ারবাজারের মন্দাভাব কাটছেই না। গত বছর বেশ কয়েকটি কোম্পানি বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। যার সুফল পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে এসব কোম্পানির বিনিয়োগের সুফল আসলে বাজার একটি নতুন রুপ পাবে। ইত্যেমধ্যে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটি দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৪০ একর জায়গার ওপর উচ্চমানের পেইন্ট উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করছে। কোম্পানিটি এই প্রকল্পে ৪৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী সোনালী নিউজকে বলেন, ‘আমরা কারখানার নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব, যা হবে একটি স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ইউনিট। এই প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৪ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে সম্পন্ন হবে। এবং আমাদের যে ব্যবসা আছে তার পণ্য সেখানে উৎপাদন শুরু হবে।’
বর্তমানে কোম্পানির চলমান পণ্য ছাড়া অন্যকোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা আমাদের বর্তমান ব্যবসার কার্যক্রম বাড়ানো এবং পণ্য উৎপাদনের কাজ করবো। তবে সেখানে কিছু জমি রেখে দিবো যা পরবর্তীতে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ নতুন কোন কাজের পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত আসলে সেটা পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত আমাদের নতুন কারখানা তৈরির ‘নন স্টপ’ কাজ চলছে। কোন রকম সমস্যা ছাড়া এ কাজ চলমান থাকবে বলে আশা করছি। এবং অল্প সময়ে আমরা সেখানে উৎপাদনে ফিরে যেতে পারবো। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজার আগামী কয়েক বছরেই এই বিনিয়োগের সুফল পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ঘর রঙ করার পেইন্টের বাজারের ৫০ শতাংশই রয়েছে বার্জারের দখলে। বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৪০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠানটি উচ্চমানের পেইন্ট উৎপাদন কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। শিল্পনগরীতে একটি 'পরিবেশ-বান্ধব' কারখানা স্থাপনের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত শিল্প নগরীতে ৩০ একর জমি ইজারা নেয় এবং ২০২০ সালে আরও ১০ একর জায়গা এর সঙ্গে যোগ করে।
বার্জার পেইন্টসয়ের নতুন কারখানায় ডেকোরেটিভ পেইন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট, মেরিন-কোটিং, উড কোটিং, কনস্ট্রাকশন এডেসিভস, কেমিক্যাল, অটোমেটিভ পেইন্ট উৎপাদিত হবে যার সবগুলোরই বাজারে উচ্চ চাহিদা রয়েছে যা দিন দিন আরও বাড়ছে৷
বার্জার পেইন্টস, এশিয়ান পেইন্টস, নিপ্পন পেইন্ট, জতুন পেইন্ট, এসিআই-এর সাথে আকজোনোবেল জয়েন্ট কোলাবোরেশন এবং আরএকে পেইন্টসের সঙ্গে কানসাই নেরোলাক পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড জয়েন্ট কোলাবোরেশন- এই ছয়টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাজারের ৮২ শতাংশ দখল করে রেখেছে। স্থানীয় ৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যরা বাজারের অবশিষ্ট ১৮ শতাংশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
বার্জার পেইন্টস ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দুটি কারখানা নিয়ে মোট বাজারের অর্ধেকজুড়েই আধিপত্য বিস্তার করছে। এর পরেই আছে ভারতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেইন্টস লিমিটেড যা মোট বাজারের ১৬ শতাংশ দখল করে রেখেছে।
বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পেইন্টস বাজার বার্ষিক ১০-১২ শতাংশ হারে প্রসারিত হচ্ছে। ওই বছর পেইন্টের বাজার ৩০০ কোটি ৩০ লাখ টাকায় পৌঁছে যা প্রায় ২ লাখ টন পেইন্টের সমমূল্য।
২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বার্জার পেইন্টস। কোম্পানিটি শেয়াবাজারে এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। বুধবার সর্বশেষ লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাড়ায় ১ হাজার ৭৩০ টাকা ৬০ পয়সা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯৫ শতাংশ আছে পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.৭০ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১.১০ শতাংশ।
সোনালীনিউজিএএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :