• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩০

আর্থিক অস্থিরতায় থাকা গ্রুপের সঙ্গে গোপন চুক্তি ওয়েস্টার্ন মেরিনের


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১২:১০ পিএম
আর্থিক অস্থিরতায় থাকা গ্রুপের সঙ্গে গোপন চুক্তি ওয়েস্টার্ন মেরিনের

ঢাকা: ব্যবসায়িক মন্দায় কয়েক বছর লোকসানে ছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। তবে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নামমাত্র মুনাফায় ফিরেছে। এরমধ্যেও আর্থিক হিসাবে কারচুপি বন্ধ হয়নি। তারা জাহাজ বিক্রি নিয়ে আর্থিক অস্থিরতার মধ্যে থাকা একটি ঝুকিপূর্ণ গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করলেও তা প্রকাশ করেনি। তারা ঋণ কমিয়ে দেখিয়েছে। এছাড়া ভূয়া সম্পদ দেখিয়েছে।

কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে অগ্রিম প্রদানবাবদ ৩৬০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা সম্পদ দেখিয়েছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে নিরীক্ষককে প্রমাণাদি দিতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিটির অনেক ঋণ নেওয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। তবে তাদের পণ্য বিক্রি সে তুলনায় অনেক কম। যা কোম্পানিটির বাজে পরিচালন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ এস.আলম গ্রুপের সঙ্গে পণ্য বিক্রি নিয়ে চুক্তি করেছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। তবে এস.আলম গ্রুপ আর্থিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে থাকলেও এসব বিষয়ে আর্থিক হিসাবে হিসাব মান অনুযায়ি তুলে ধরেনি ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিষয়টি কোম্পানির পণ্য বিক্রি কেমন প্রভাবিত হবে, তা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ঋণের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। তাদের ১৯টি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে ঋণের পরিমাণ দেখিয়েছে ২ হাজার ২৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অথচ ২টি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া স্টেটমেন্টের তথ্যেই গরমিল পেয়েছে নিরীক্ষক। কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ঋণ উল্লেখ করা হয়েছে। 

তবে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের স্টেটমেন্টে যথাক্রমে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ৪৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঋণ বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ১৪ লাখ টাকার ঋণ কম দেখিয়েছে। কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি ৯৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া থেকে ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, সোনালি ব্যাংক থেকে ১৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ১৫৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া রয়েছে।

এসব বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ওয়েস্টার্ন মেরিনের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.৯৯ শতাংশ। কোম্পানিটির বুধবার (২২ জানুয়ারি) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৯.৭০ টাকায়।

এএইচ/এম

Wordbridge School
Link copied!