ঢাকা: জুলাইয়ে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবার ভিন্ন বাস্তবতায় জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সোমবার (২ জুন) সংসদের বাইরে বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এটি হবে দেশের ৫৫ তম বাজেট। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের বাজেট ছিল বাংলাদেশের ৫৪ তম বাজেট। যা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ছিল ২৫তম বাজেট ঘোষণা।
এদিন বিকেল ৩ টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে বাজেট বক্তৃতা দেবেন। ধারণকৃত এই বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হবে। জাতীয় বাজেটের ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে বাজেট ভাষণটি একই সঙ্গে সম্প্রচার করতে বিবরণীতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল। তখন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হয়েছিল।
তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দশবার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।
নির্বাচিত সরকারের আমলে জাতীয় সংসদেই এসব বাজেট উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সংসদে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করা হতো। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হতো। তবে এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, সর্বশেষ খসড়া অনুযায়ী, আগামী বাজেটের আকার নির্ধারিত হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যয় সংকোচনের মূল কারণ-আইএমএফের শর্ত পূরণ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ।
জানা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে গ্রামীণ পর্যায়ে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া জুলাই যোদ্ধাদের জন্য এই সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কৃষিখাত থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপরও কোনো কর আরোপ করা হবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর ব্যবস্থায় একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহের করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর টার্নওভার করের সীমা ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবায় উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
নির্মাণ সেবায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। রড উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।
আয়কর কাঠামোর পাশাপাশি আমদানি ও ভোগ্যপণ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, অপরদিকে সিগারেট পেপার আমদানিতে শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ শতাংশ করা হয়েছে।
সুতা উৎপাদনে কেজিপ্রতি কর ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আগাম কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৫২টি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে। প্লাস্টিকের সব ধরনের পণ্যের ওপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ন্যাপকিন, তরল দুধ ও কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এলএনজি আমদানিতেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এআর







































