• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

যুব সমাজকে নেশার ছোবল থেকে রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা চাই


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৮, ২০১৬, ১১:৪২ এএম
যুব সমাজকে নেশার ছোবল থেকে রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা চাই

মাদক এখন সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কেননা মাদক সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্যে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সমাজের প্রভাবই গিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের ওপর। সমাজই হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। আর একটি সুন্দর সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠন করতে আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সবারই উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ও অবদান রাখতে হয়। কেননা সমাজ গড়ে ওঠে অনেক মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। সেজন্যই কারো একার পক্ষে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

মাদক আগ্রাসন যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্ন এখন জনমনে। মাদকের কুপ্রভাব যেভাবে বিস্তৃত হয়ে পড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। এর ভয়াল আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ সর্বনাশা নেশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মাঝে। ইদানীং এ নেশা মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারেও বিস্তার লাভ করেছে। নেশার জন্য ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকে দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। নেশার টাকা জোগাড় করতে হাইজ্যাকসহ দস্যুপনার সঙ্গেও জড়িত হচ্ছে। 

ফেনসিডিল, ইয়াবা, ভায়াগ্রার জীবনবিনাশী আগ্রাসনের শিকার হয়ে দেশের যুব সমাজ নৈতিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদকের গডফাদাররা সীমান্তের পেশাদার, দাগি চোরাকারবারিদের মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার মাদক দেশের ভেতরে নিয়ে আসছে আর আমাদের যুব সমাজ ক্রমাগতভাবে মাদকের ভয়াবহ ছোবলে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইনানুগ মনিটরিংয়ের অভাবে মাদকের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট সারাদেশেই অতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং স্কুল-কলেজের নেশাগ্রস্ত তরুণদের মধ্যে ইয়াবার চাহিদাই রাজধানীসহ সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে। বিনোদন স্পটসহ প্রতিটি দর্শনীয় পয়েন্টে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও জনপদেও ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। যুবসমাজ বিশেষত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ ইয়াবাসহ আরো বিভিন্ন মাদকের ছোবলে পড়ে যেমন শিক্ষাজীবন বিনষ্ট করতে বসেছে, তেমনই সমাজের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে বিপন্ন ও বিশৃঙ্খল করে তুলছে। মাদকদ্রব্য কিনতে অভিভাবকদের কাছ থেকে নেশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা যেমন অর্থ নিয়ে নষ্ট করছে, তেমনই অনেকে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি পর্যন্ত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নেশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও মুখোমুখি হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।

অধিকাংশ বাবা মা-ই খবর রাখেন না যে, তার আদরের সন্তান ঘরের বাইরে কী করে? এমনকি অনেক বাবা মা ঘরের ভেতরে সন্তান কী করে সে খবরও জানেন না। বাবা মায়ের এই অসতর্কতার কারণেও অনেক সময় ছেলে মেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কমবেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। বাংলাদেশেও মাদক ও মাদকাসক্তি এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

দেশের অধিকাংশ মাদকসেবী কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতী। যে যুব সমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নিভর্রশীল, তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যদি মাদকাসক্তিতে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে সে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমাদের যুব সমাজের প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। তারুণ্যের শক্তি যেমন দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি এর উল্টোটি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতির কারণও হতে পারে।
তরুণ সমাজের একটি অংশ নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের পাশাপাশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আপলোডের মাধ্যমে ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অপপর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে পড়ছে।

এর কুফলে দিনকে দিন ইভ টিজিং, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, গুম ও অপমৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। নেশার ছোবলে যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্য বোধের অবক্ষয় দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। দেশের যুব সমাজকে সর্বনাশা নেশার ছোবল থেকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কী কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? আমরা দেশের যুব সমাজকে নেশার ছোবল থেকে সুরক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা চাই।

Wordbridge School
Link copied!