• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেট যেখানে সমাজ বদলের হাতিয়ার


দ্বীন ইসলাম আরিয়ান মার্চ ৩০, ২০১৮, ০২:৩৬ পিএম
ক্রিকেট যেখানে সমাজ বদলের হাতিয়ার

ঢাকা : তাদের লক্ষ্য আধুনিক আর শিক্ষিত জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে দিন-রাত। একদল তরুণের হাত ধরে ধীরে ধীরে এটি সারা পৃথিবীতেই পরিচিত হয়ে উঠছে মাসাই গোষ্ঠীর নাম। নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রেখেই আধুনিকতার পথে হাঁটছে তারা। ভিক্টোরিয়া হ্রদের পশ্চিম তীরেই মাসাই জনগোষ্ঠীর বাস। কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ার সীমান্ত তাদের দুই ভাগ করলেও দুদেশের মাসাইরা নিজেদের উন্নতির জন্য একাট্ট।

আদিবাসী মাসাইয়ের মানুষ বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনের কারণটি ক্রিকেট। তাদের কাছে ক্রিকেট শুধু খেলাই নয়, প্রেরণার আরেক নাম। এই খেলাকে অবলম্বন করে সমাজকে বদলে দেওয়ার ব্রত হাতে তুলে নিয়েছে একদল তরুণ। ক্রিকেট নিয়ে তারা পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত সব গ্রামে। মানুষকে কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্ত করার এ যেন এক পরশ পাথর।

এইডস, বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন আর লিঙ্গবৈষম্যের মতো সমস্যাকে অনেক দূর কাটিয়ে উঠেছে মাসাই উপজাতিরা। গবেষণা বলছে, আফ্রিকার অন্য উপজাতিদের চেয়ে মাসাইদের মধ্যে শিক্ষার হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মূলেও আছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের সঙ্গে একাÍ হতে গিয়েই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তাদের।

মাসাইদের প্রধান পেশা পশু পালন। তাদের সমাজে সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কার গোয়ালে কতগুলো গরু আছে তা দিয়ে। যার গরুর সংখ্যা যত বেশি তিনি তত ধনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পালিত পশুকে নিয়ে তাদের সমাজে অনেক কুসংস্কারও প্রচলিত আছে।

মাসাইদের ক্রিকেট খেলার শুরুটা হয়েছিল রাখালদের হাত ধরে। ইংল্যান্ডের রাখালরাই একসময় সময় কাটানোর জন্য খেলার সূচনা করেছিল। আজ তা বিশ্ব আসরে জনপ্রিয়তম খেলাগুলোর একটি। কেনিয়ার এই রাখাল উপজাতির হাতে এসে ক্রিকেট বদলে দিয়েছে তাদের সমাজ চিত্র।

এই ক্রিকেট দল আর দশটা দলের মতো নয়। মাসাইরা ক্রিকেট খেলার সময় পড়েন না ট্রাউজার-জার্সি। প্যাড-গ্লাভস ব্যবহার করলেও তারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেই ক্রিকেট মাঠে দৌড়ঝাঁপ দেন। লাল রঙের একটুকরো কাপড় কোমরে পেঁচিয়ে তাতে জড়ানো হয় নানা অলঙ্কার। কোমরের বেল্টে থাকে শিকারের প্রতীক ছুরি। আদুল গায়ে নানা অলঙ্কার জড়িয়ে বল হাতে যখন দৌড়ান বাতাসে একটা মিষ্টি আওয়াজ ভেসে ওঠে।

ক্রিকেট নিয়ে বিশ্ব আসরে তাদের আবির্ভাব ঘটে ২০১২ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং ২০১২ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। অপেশাদার দলগুলো নিয়ে এই আয়োজনে সেবার চতুর্থ স্থান অর্জন করে মাসাইয়ের ক্রিকেটযোদ্ধারা। তারপর শুধুই সামনে চলা। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশেও ক্রিকেট খেলে এসেছে দলটি।

‘একটা জাতির নিজেকে বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে চাইলে মনে হয় না খেলাধুলার চেয়ে ভালো কোনো কিছু আছে। আমরা সেই পথটাই বেছে নিয়েছি।’

নিজের ফেসবুকে কথাগুলো লিখে রেখেছেন সন্যংগা ওলে এনগাইস (Sonyanga Ole Ng’ais)।  বর্তমানে তিনি মাসাই ক্রিকেট ও্যারিয়র্স-এর অধিনায়ক। তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয়েছিল এই যুদ্ধের। আস্তে আস্তে বাড়ছে এর ব্যাপ্তি। মেয়েদেরও যুক্ত করা হয়েছে এই আন্দোলনে। গড়ে তোলা হয়েছে মেয়েদের ক্রিকেট দলও। ক্রিকেটকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখা এই উপজাতিই একদিন হয়তো সত্যিই হয়ে উঠবে পৃথিবীর অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ জাতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!